দেশে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল কোর্টে আসামির জামিন
দেশে প্রথমবারের মতো নিম্ন আদালতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জামিন আবেদন শুনানি করে ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন শুনানির মাধ্যমে এ পদ্ধতির বিচারিক কার্যক্রমের সূচনা করা হলো।
এর মধ্য দিয়ে করোনা ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে দীর্ঘ প্রায় ৪৫ দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার আদালতের কার্যক্রম অনলাইন মাধ্যমে চালু করা হয়েছে।
দেশে প্রথমবারের মতো নিম্ন আদালতে এই ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম মঙ্গলবার শুরু হয় সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। বেলা ১১টায় সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আহমেদ একটি বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন জামিন আবেদন দাখিলকারী সিলেট জেলা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজ উদ্দিনের সঙ্গে। এ সময় বিচারক তার খাস কামরায় ও আইনজীবী তাজ উদ্দিন নিজ চেম্বারে বসা ছিলেন।
আবেদনকারী আইনজীবী ভিডিও স্ক্রিনে থেকে সরাসরি নিজের বক্তব্য তুলে ধরে জামিন প্রার্থনা করেন। একই সময়ে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে কোর্ট ইন্সপেক্টর নির্মল দেব জামিন আবেদনের বিরোধীতা করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
এরপর একে একে একই আদালতে আরও আটটি জামিন আবেদনের শুনানি হয়। দুপুরের পর সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও বেশ কয়েকটি জামিন শুনানি হয়।
সিলেটে প্রথম ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনাকারী সিলেট বারের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজ উদ্দিন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে সারা দেশে লকডাউন শুরু হয়। সরকার সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এরপর থেকেই বন্ধ হয়ে পড়ে আদালতের কার্যক্রম। এরপর প্রধান বিচারপতি সীমিত পরিসরে আদালত চালুর উদ্যোগ নিলেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বিধায় উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এ অবস্থায় কারাবন্দিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার স্বার্থে সরকার ভিটিও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জামিন শুনানির উদ্যোগ নেয়।
তিনি বলেন, ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় দেশে প্রথমবারের মতো সব আদালতে অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ‘ভার্চুয়াল কোর্ট অধ্যাদেশ-২০২০’ অনুমোদন করা হয়। পরদিন ৮ মে রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশ অনুমোদন করেন। ৯ মে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল পরিপত্রের মাধ্যমে দেশের সব আদালতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জামিন শুনানি শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয়।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার (১১ মে) সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আহমেদ উদ্যোগী হন সিলেটে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর ব্যাপারে। তিনি ওই দিন দুপুর ১টায় তার কোর্টে জামিন আবেদন দাখিলের নির্দেশনা জারি করেন। ওই দিন বিকেল ৩টায় সিলেট বারের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজ উদ্দিন অনলাইনে জামিন আবদেন দাখিল করেন। আদালত আবেদন গ্রহণ করে মঙ্গলবার সকালে শুনানি শুরু করেন।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজ উদ্দিন বলেন, ভার্চুয়াল কোর্ট বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে চালু রয়েছে। তবে এ ব্যবস্থা বাংলাদেশে একেবারে নতুন। কিন্তু এটি অত্যন্ত সহজ ও গ্রহণযোগ্য একটি পদ্ধতি। এর মাধ্যমে বিচারক তার খাস কামরায় বসে এবং আইনজীবী তার চেম্বারে বসেই শুনানি করতে পারেন। সামাজিক দূরত্বে থেকে এ ধরনের শুনানি সহজ। এমনকি শুনানি শেষে আদালত ই-মেইলের মাধ্যমে কারাগারে বন্দি লোকজনের মুক্তির আদেশ জেলখানায় পাঠান। ফলে আদালতের আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব।
সিলেট জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পদ্ধপরিকর। দেশের নিম্ন আদালত এখন ভার্চুয়াল কোর্টের আওতায় আসায় আরও অনেকখানি এগিয়ে গেল বিচারব্যবস্থা।
তিনি বলেন, ভার্চুয়াল কোর্টে প্রাথমিকভাবে শুধু জামিন শুনানি করা হচ্ছে। তবে দেশে লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে আত্মসমর্পণপূর্বক জামিন আবেদনসহ অন্য কার্যক্রমও চালু করা হবে।
ছামির মাহমুদ/এএম/এমএস