ওএমএসের চালে ভাগ বসালেন আ.লীগ নেতা
কোভিড-১৯ নামের অদৃশ্য এক ভাইরাসের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে গোটা পৃথিবী। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন হয়ে মানবেতর দিন কাটছে বহু মানুষের। সচেয়ে বেশি কষ্টে দিনযাপন করছেন খেটেখাওয়া মানুষগুলো।
তাই এসব মানুষদের জন্য সরকার বিশেষ ওএমএস সুবিধা চালু করেছে। আর এজন্য দেয়া হচ্ছে ওএমএস কার্ড। তবে গরিবের এই ওএমএস কার্ডেও ভাগ বসিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের পদধারী এক নেতা। নিজের স্ত্রী ও মেয়ের নাম তুলেছেন ওএমএস কার্ডের তালিকায়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সচেতন মহলে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভিক্ষুক ও ভবঘুরেসহ হতদরিদ্র এবং নিম্নআয়ের মানুষ, যারা কোনো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অন্তর্ভুক্ত নয়; তাদের জন্য বিশেষ ওএমএস সুবিধা চালু করা হয়েছে। এই সুবিধায় একজন ওএমএস কার্ডধারী প্রতি মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ২০ কেজি করে চাল পাবেন। সেজন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা এলাকায় নয় হাজার ৬০০ জনকে দেয়া হচ্ছে ওএমএস কার্ড।
কার্ডের জন্য প্রথম দফায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে এ তালিকা করা হয়েছে। প্রথম দফার তালিকা অনুযায়ী ইতোমধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে ২০ কেজি করে চাল পেয়েছেন তারা। তবে তালিকা নিয়ে প্রথম থেকেই সমালোচনা শুরু হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিত্তবানদের নামও দেয়া হয়েছে ওএমএস কার্ডের তালিকায়। পৌরসভার মাধ্যমে পাওয়া তালিকা থেকে আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারসহ মোট ৯১ জন সামর্থ্যবানের নাম বাদ দেয়ার জন্য বলেছে জেলা ওএমএস কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহ আলমের পরিবার এবং স্বজনদের নাম উঠেছে ওএমএস কার্ডের তালিকায়। তালিকার ১২ নম্বরে মেয়ে আফরোজা এবং ১৬ নম্বরে রয়েছেন স্ত্রী মমতাজ আলমের নাম। এছাড়া শাহ আলমের তিন ভাই-বোন মো. সেলিম, মো. আলমগীর ও শামসুন্নাহারের নাম রয়েছে ৮, ৯ ও ২৭ নম্বর ক্রমিকে।
পাঁচতলা বাড়ির মালিক শাহ আলম গরিবের ওএমএস কার্ডে স্ত্রী-সন্তানের নাম তোলায় সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র। এ ঘটনায় সরকার যে সুবিধা দিচ্ছে; সেটি থেকে গরিব-অসহায়রা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, যাদেরকে তালিকা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা যদি প্রকৃতদের এড়িয়ে পছন্দের লোকদের নাম দেন সেটি তো ঠিক না। এতে করে যে উদ্দেশ্যে সরকার যাদের জন্য এই সুবিধা দিচ্ছে সেটি তারা পাবে না।
নিজে সামর্থ্যবান হয়েও গরিবের ওএমএস কার্ডের তালিকায় পরিবার-স্বজনদের নাম উঠানোর ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহ আলম বলেন, আমাকে বলা হয়েছে মহল্লার হতদরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত যারা আছেন তাদের তালিকা করতে। এই তালিকা কাউন্সিলরের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি এবং পৌরসভা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করবে। তাছাড়া আমি কোনো কার্ড বণ্টন করিনি।
তবে ওএমএস কার্ডে বিত্তবানদের নাম তোলার ব্যাপারে জানতে চাইলে পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকবুল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি সৎপথে রয়েছি। জানামতে কোনো ভুল করিনি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, ওএমএস কার্ডের তালিকায় সামর্থ্যবানদের নাম ওঠার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। তালিকা যাচাই-বাছাই করে সামর্থ্যবান যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের বাদ দেয়ার জন্য আমরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। ইতোমধ্যে ওএমএস কমিটির সভায় ৯১ জন সামর্থ্যবানকে চিহ্নিত করে তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বলেন, তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতার পরিবার ও স্বজনদের নাম ওঠার বিষয়টি আমি শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আজিজুল সঞ্চয়/এএম/পিআর