ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিলেও মানুষের আচরণ কষ্ট দেয় তাদের

জেলা প্রতিনিধি | রাজবাড়ী | প্রকাশিত: ০৫:০৯ পিএম, ১১ মে ২০২০

চীনের উহানে উৎপত্তির পর করোনা ভাইরাস এখন সারাবিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে। করোনার থাবা থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশও। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসে শুধু সাধারণ মানুষ নয় প্রাণ হারিয়েছেন এ যুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া চিকিৎসক, সাংবাদিক, পুলিশসহ অনেকেই।

তারপরও নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেই করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা। এমনি দুজন হলেন রাজবাড়ীর আধুনিক সদর হাসাপতালের মেডিসিন ও কার্ডেওলোজি বিভাগের চিকিৎসক ও রাজবাড়ী করোনা ইউনিটের প্রধান ডাক্তার শামীম আহমান। অপরজন হলেন হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আব্দুল্লাহ আল মামুন। যিনি ওই করোনা ইউনিটের ইনচার্জ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা রোগীদের সেবা দিলেও করোনা ইউনিট থেকে চিকিৎসা দিয়ে বের হলেই ভিন্ন চোখে দেখেন সবাই। যেন তারা কোনো ভিনগ্রহের মানুষ।

ডা. শামীম আহসান ২৭তম বিসিএসে ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্বায়িত্ব পালন করে প্রায় ৩ বছর ধরে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে কর্মরত। পরিবারে আছেন স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ও তিন সন্তান। স্ত্রীও চিকিৎসক। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। ছোট ছোট তিনটি বাচ্চা তাদের মায়ের সঙ্গে ঢাকার বাসায় থাকলেও ডা. শামীম বৃদ্ধ বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে বাস করছেন জেলা শহরের দক্ষিণ ভবানীপুরে।

ডা. শামীম আহসান বলেন, তিনি একজন চিকিৎসক। তার দায়িত্ব রোগীর সেবা দেয়া। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও স্বেচ্ছায় করোনা রোগীদের চিকিৎসায় কাজ করে যাচ্ছেন। প্রথমে পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করলেও এখন বরং উৎসাহ দেন। রোগীদের সংস্পর্শে আসার পর থেকে নিজ বাড়িতে আলাদা রুমে থাকছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, জেলা পর্যায়ে যতটুকু সক্ষমতা আছে সে অনুযায়ী সাধ্যমত চেষ্টা করছেন তারা। এখন পর্যন্ত করোনা ইউনিট থেকে তাদের চিকিৎসায় ১১ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং ভর্তি আছেন ২ জন। করোনা রোগীদের চিকিৎসা করতে পেরে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। তবে করোনা ইউনিট থেকে যখন বের হন তখন তাদের সঙ্গে মিশতে ভয় পান সাধারণ মানুষ। মানুষের এমন আচরণ তাদের কষ্ট দেয়।

একই ইউনিটের আরেক করোনা যোদ্ধা ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন। যিনি রাজবাড়ীর আধুনিক সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সিনিয়র স্টাফ নার্সের দ্বায়িত্বে রয়েছেন। তার পরিবারে রয়েছে স্ত্রী ও দুই সন্তান।

ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত ২৩ মার্চ থেকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে খোলা হয় আইসোলেশন ইউনিট। শুরু থেকেই তিনি ইউনিটের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রোগীদের ভর্তি থেকে শুরু করে তাদের দেখাশুনার সার্বিক দায়িত্ব তার। গত ১১ এপ্রিল রাজবাড়ীতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলে ওই দিনিই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হাসপাতালের একটি কক্ষে থাকছেন।

jagonews24

পরিবারের সঙ্গে ডা. শামীম আহমান

হাসপাতালের পাশেই তার বাসা হলেও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্ত্রী, সন্তান ছেড়ে দূরে রয়েছেন। এত ত্যাগ স্বীকার করে রোগীদের সেবা দিলেও করোনা ইউনিট থেকে বের হলেই তাদের ভিন্ন চোখে দেখে সবাই। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দূরে দূরে থাকে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই মুহূর্তে মানব সেবায় নিয়োজিতদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।

ডাক্তার-নার্স ছাড়াও ঝুঁকি নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে চলেছেন হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান নন্দ দুলাল ও শহিদুল ইসলাম। রোগীদের সেবা দিতে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয়সহ ২৮ জন শিফট অনুযায়ী দ্বায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানান তিনি।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, করোনা রোগীদের সেবাদানকারী সকল চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যরা অনেক আন্তরিক। উপজেলা পর্যায়ে আইসোলেশন ইউনিট থাকলেও জেলা সদর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত ১৩ জন করোনা রোগী আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। আর সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১০ মে পর্যন্ত ১১ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। দুই শিফটে বিভক্ত হয়ে সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. নেওয়াজ আহম্মেদ ও জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শামীম আহসানের নেতৃত্বে করোনা রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, রাজবাড়ীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার বেডের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সেনাবহিনী ও স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং ব্যবসায়ী কাজী ইরাদত আলীর সহযোগিতায় যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দুইশ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রুবেলুর রহমান/এফএ/এমকেএইচ