ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

লকডাউন শিথিল হতেই মার্কেটমুখী মানুষ

জেলা প্রতিনিধি | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ০৮:৩০ এএম, ১১ মে ২০২০

সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১০ মে থেকে সীমিত আকারে দোকানপাট খোলার নির্দেশনা দেয় সরকার। তবে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে রাজধানীসহ জেলা-উপজেলার অনেক ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মার্কেট মালিক সমিতি দোকানপাট না খোলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। কক্সবাজার জেলাতেও একই ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা মতো ১০ মে লকডাউন শিথিলে ভোর থেকেই মার্কেটমুখী হয়েছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। তাদের বুঝিয়ে ঘরে ফেরাতে গলদঘর্ম অবস্থা হয়েছে ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির নেতাদের।

তাদের মতে, মার্কেটমুখী মানুষগুলো লকডাউন শিথিলকে কারামুক্তির আনন্দ হিসেবে নিয়েছে। তারা নিজেদের বিপদের মুখে ঠেলে দেয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও ঝুঁকিতে ফেলছে।

পর্যটন শহর কক্সবাজারকে করোনামুক্ত রাখতে গত ১৮ মার্চ থেকেই পর্যটক ও বহিরাগত আসা বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এরপর করোনা রোগী শনাক্ত শুরু হলে পুরো জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয় গত ৮ মে থেকে। বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাড়ানো হয় সেনা টহলসহ প্রশাসনিক তৎপরতা। করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়াদের বাড়ি বাড়ি পাঠানো হয় সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত সহযোগিতা। সীমিত করা হয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনাও।

এরপরও কেউ কেউ চোর-পুলিশ খেলার মতোই বাইরে এসেছেন। খাবারের অভাবের কথা বলে দোকানপাট খোলার চেষ্টা চালিয়েছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন ১০ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট ও দোকানপাট খুলতে। কিন্তু এর আগেই শনিবার (৯ মে) দুপুর থেকেই কক্সবাজার জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকার মার্কেট, রামু উপজেলার কলঘর বাজার, রামু বাজার, জোয়ারিয়ানালা বাজার, চৌমুহনী, সদরের ঈদগাঁও বাজার, বাংলা বাজার, খরুলিয়া বাজার, উপজেলা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মার্কেট খোলার ট্রায়েল চলে।

market.jpg

এদিকে জেলা মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি এবং কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স সবাইকে নিয়ে সভা করে শনিবার জানিয়ে দেন ঈদ পর্যন্ত কোনো মার্কেট খোলা হবে না। এই ঘোষণা জানার পর মানুষের মাঝে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্ক কমলেও রোববার (১০ মে) লকডাউন শিথিলে লোকসমাগম বেড়ে যাওয়ায় আবারও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

করোনা পরীক্ষায় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে স্থাপন করা পিসিআর ল্যাবে প্রথম দিকে কম রোগী শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি এটি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। যার কারণে জনচলাচল ও লোকসামাগম বেড়ে যাওয়ায় করোনা প্রাদুর্ভাবের আতঙ্ক বেড়েছে বহুগুণ। লকডাউনের কারণে জনচলাচল নিয়ন্ত্রণ থাকায় এতোদিন করোনা রোগীর সংখ্যা কমছিল বলে মনে করেন জরুরি ওষুধ সেবায় নিয়োজিত জাকির হোসেন নামে এক পেশাজীবী।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মুকুল বলেন, ১০ মে লকডাউন শিথিলে ঘোষণা আসার পর থেকেই গত কয়েক দিনে মানুষ বাড়ির বাইরে আসা শুরু করে। দোকানিরা একটু ফাঁক করে দোকান খুলে বেচাকেনা শুরু করেছেন। গত এক সপ্তাহে কক্সবাজারে করোনা রোগীও বাড়ছে। এটি দেখে সকল সচেতন ব্যবসায়ী মিলে ঈদ পর্যন্ত মার্কেট না খোলার সিদ্ধান্ত নিলেও কিছু কিছু লোভী ব্যবসায়ী নেতা সাধারণ ব্যবসায়ীদের উস্কে দিয়ে দোকান খোলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এরই মাঝে রোববার ভোর থেকেই শহরে অসচেতন নারী-পুরুষ এসে কৃষি অফিস সড়কের মার্কেটসহ হকার মার্কেট এলাকায় ভিড় জমান। প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়।

market.jpg

তিনি বলেন, অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও কর্মচারীর বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া। সেখানে করোনার প্রাদুর্ভাব বেশি। দোকান খোলার খবরে বাড়ি যাওয়া ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা কক্সবাজার ফিরে এসেছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন বেচাকেনা করতে গেলে গণহারে করোনা ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকায় আমরা কক্সবাজারে ভয়াবহ পরিস্থিতি রোধে মার্কেট না খুলতে এবং বেচাকেনা বন্ধ রাখতে অনুরোধ জানাচ্ছি। ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এটা সবাই দেখছেন, কিন্তু জীবনটাই যদি ঝুঁকিতে পড়ে তখন টাকা দিয়ে কি হবে?

অন্যদিকে শহরের পাশাপাশি গ্রামের প্রায় প্রতিটি এলাকার দোকান ও উপজেলার নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলেছে। সেখানেও মানুষের ভিড় রয়েছে। অনেক স্থানে মোড়ে মোড়ে আগের মতো যানজটেও অনেককে আটকা পড়তে হয়েছে।

রামু চৌমুহনী এলাকায় ওষুধ কিনতে আসা শহিদুল্লাহ বলেন, জীবনের মূল্য বুঝি বলেই লগডাউনের পর বাসা থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হইনি। রোববার দুপুরে বের হয়ে অবাক হতে হয়েছে। মনে হয়েছে লকডাউন উঠে গেছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার বলেন, এটা কঠিন মুহূর্ত। এতো প্রচারণার পরও নিজেদের ভেতর সচেতনতা না আসলে কঠিন নিয়মে মানুষকে বন্দি রাখা কষ্টসাধ্য। এরপরও প্রশাসন নিজের মতো করে সবকিছু নজরে রাখছে। লোকজনের জটলা দেখা দিলে সতর্ক করা হচ্ছে। স্ব্যাস্থবিধি না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হবে। শেষ কথা হলো নিজেকে এবং কক্সবাজারকে নিরাপদ রাখতে হলে সবার মাঝে সচেতনতা জরুরি।

সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/জেআইএম