জনস্বার্থে আজ বিপণি-বিতান খোলেনি যেসব জেলায়
মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনায় মারা গেছেন ১৪ জন আর নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৮৮৭ জন। এরই মধ্যে আজ থেকে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে জনস্বার্থে করোনা প্রতিরোধে ঢাকার কিছু শপিংমলসহ বিভিন্ন জেলায়ও আজ শপিংমল ও বিপণি-বিতান খোলা হয়নি। জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা এবং উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এসব তথ্য জানা গেছে।
বরিশালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রায় সব বিপণি-বিতান ও মার্কেট বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে একদিন আগেও দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ছিল বিপণি-বিতান ও মার্কেটের দোকান মালিকদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ সামনে রেখে সীমিত আকারে রোববার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে দোকান খোলার সুযোগ দিয়েছে সরকার। ফলে ব্যবসায়ীরা দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে সিটি মেয়রের অনুরোধে এবং করোনা সংক্রমণের এই সময়ে দোকান মালিক, কর্মচারী ও ক্রেতাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বরিশালের মানুষের কেনাকাটার একটি বড় কেন্দ্র চকবাজার-কাঠপট্টি-লাইনরোড-পদ্মাবতি। অন্য বছরগুলোতে ঈদের আগে এ সময় কেনাকাটায় সেখানে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকত সেখানে আজ বেলা ১১টার দিকে ঘুরে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা।
চকবাজার-কাঠপট্টি-লাইনরোড-পদ্মাবতি ব্যবসায়ীক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুর রহিম জানান, দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ঈদের কেনাকাটার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১০ মে থেকে সীমিতভাবে দোকানপাট খোলার সুযোগ দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে তারা আজ থেকে দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু শনিবার রাতে নগরীর কালিবাড়ি রোডে সিটি মেয়রের বাসায় এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুরোধে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
নগরীর গির্জা মহল্লা ভেনাস মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি মো. কামাল হোসেন জানান, তাদের মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে মেয়রের অনুরোধে মার্কেটের সব দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে।
বরিশাল মহানগর দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন দত্ত জানান, ক্ষুদ্র, খুচরা ও পাইকারি দোকানদারদের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন। তবে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। দোকানপাট খোলা থাকলে মানুষের সমাগম বাড়তো। ভিড় বাড়লে দোকান কর্মচারীদের সুরক্ষা মানা সম্ভব হতো না।
বরিশালের সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, বিপণি-বিতান ও মার্কেট খোলা থাকলে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটত। এতে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। এ চিন্তা থেকেই বিপণিবিতান ও মার্কেট বন্ধ রাখার জন্য ব্যবসায়ী নেতাদের অনুরোধ করা হয়েছিল। ব্যবসার চেয়ে জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে তারা অনুরোধ রেখেছেন।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আসন্ন ঈদ উপলক্ষে শহরের মার্কেটগুলো খোলা হয়নি আজ। শুক্রবার (৮মে) বিকেলে বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
চেম্বার সভাপতি মো. এরফান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় শহরের নিউ মার্কেট, ক্লাব সুপার মার্কেট, শহীদ সাটু হল মার্কেট ও ডিসি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি ও স্বর্ণকার সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ক্লাব সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারাণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় মার্কেট খুললে ঈদের কেনা কাটার জন্য ক্রেতাদের ভিড় হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও সরকারি নির্দেশনা মেনে কেনাবেচা করা সম্ভব হবে না। ক্রেতা বিক্রেতা সকলেই করোনা ঝুঁকিতে পড়বে। সে কারণেই আমরা মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মো. এরফান আলী জানান, শহরের ৬টি মার্কেটের নেতৃবৃন্দ সকলে এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে জীবন থাকলে ব্যবসা পাওয়া যাবে কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে জীবন আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জেও জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার (৯ মে) রাতে শায়েস্তাগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ও দাউনগর বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শায়েস্তাগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম শিবলু বলেন, হবিগঞ্জে করোনা রোগী বাড়ছে। এই অবস্থায় আমরা কোনোভাবেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে মানুষকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দাউদনগর বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান মাসুক বলেন, ঈদ পর্যন্ত দাউনগর বাজারের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এছাড়া বান্দরবানেও ঈদের আগে বিপণী বিতানসহ বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। ঈদের পরে পরিস্থিতি দেখে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে।
ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবু ছালেহ চৌধুরী জানান, প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়ীদের সভা হয়েছে। সুরক্ষা শর্তের ঝক্কি ঝামেলাসহ সবদিক বিবেচনা করে ব্যবসায়ীরা একমত হয়ে বলেছেন বান্দরবানে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়নি। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে বাইরে থেকে শত শত কর্মচারী বান্দরবানে এসে ঢুকবে। ওই কর্মচারীদের দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালালে মালিক, ক্রেতা ও কর্মচারী সবাই ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য ঈদের আগে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ব্যাপারে তারা প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন।
এফএ/এমকেএইচ