ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বকেয়া টাকার জন্য মিল গেটে কান্নায় ভেঙে পড়লেন আখচাষিরা

জেলা প্রতিনিধি | পাবনা | প্রকাশিত: ০৯:৩৭ পিএম, ০৭ মে ২০২০

করোনার মহাবিপর্যয়কালেও দেশের চিনিকলগুলো আখচাষিদের বকেয়া পরিশোধে উদ্যোগ নেয়নি। পাবনাসহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ১৫টি চিনিকলে ৫ লাখ আখচাষির বকেয়া প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

পাবনা চিনিকলের কাছেই চাষিদের পাওনা ২০ কোটি টাকা। এ বকেয়া না পেয়ে করোনার এ দুর্যোগে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এদিকে বকেয়া পাওনার দাবিতে বৃহস্পতিবার (৭ মে) দুুপরে পাবনা চিনিকলের সামনে সমাবেশ করেছেন আখচাষিরা। আখচাষি কল্যাণ সমিতি, পাবনা এবং বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশনের উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে চিনিকলের আখচাষি প্রতিনিধিরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অংশ নিয়ে তাদের ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। অনেক চাষি নিরাশ হয়ে মিল গেটে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তাদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিভিন্ন দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছে দেন।

পাবনার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কালিকাপুর পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের পাশে চিনিকলের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও আখচাষি সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা সুগার মিলস আখচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলহাজ শাহজাহান আলী বাদশা ওরফে পেঁপে বাদশা, আখচাষি কল্যাণ সমিতি পাবনা সুগার মিলস্ লিঃ এর সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী ডিলু, আমজাদ হোসেন মালিথা, মাহাতাব উদ্দিন মোল্লা, হাসান আলী, পাসুমি’র ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহীন প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাবনা চিনিকলের আখচাষিদের বকেয়া প্রায় ২০ কোটি টাকা। আর দেশের ১৫টি চিনিকলে ৫ লাখ আখচাষির পাওনা প্রায় ২০০ কোটি টাকা। তারা জানান, করোনা সংকটে আজ তারা অনেকেই কর্মহীন।

ঈশ্বরদীর পাকুড়িয়া গ্রামের ৭০ বছরের বেশি বয়সী আখচাষি আব্দুল মালেক মালিথা জানান, আমি ২৫- ৩০ বিঘা আখ চাষ করি। এ আখ বিক্রির টাকা দিয়ে চাল-ডালসহ জীবিকা নির্বাহ করি।

তিনি বলেন, ১৬ মাস ধরে পরিচর্যা করে আখ পাই। অথচ সেই আখ বিক্রির টাকা এখন পাচ্ছি না। চলতি করোনা দুর্যোগে ও রমজানে তাদের টাকার প্রয়োজন হওয়া সত্ত্বেও পাচ্ছেন না। সন্তানদের লেখাপড়ার চাহিদা মেটাতে আর পাওনাদারদের চাপে আমরা দিশেহারা।

jagonews24

ঈশ্বরদীর সাড়া গোপালপুর গ্রামের আখচাষি মাহাতাব মোল্লা জানান, আমরা চরম সমস্যায় আছি। ১৬ মাস ধরে ফসল চাষ করে মিলে আখ দিয়ে টাকা পাচ্ছি না। এতে জমিতে নতুন আখ ক্ষেতেরও পরিচর্যা করতে পারছি না।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আসন্ন ঈদে ছেলে-মেয়েদের নতুন করে একটা জামাকাপড় কিনে দেব তাও পারছি না। কৃষকবান্ধব সরকার একটা ব্যবস্থা করবেন বলে আশা করি।

আখচাষি কল্যাণ সমিতি পাবনা সুগার মিলস্ লিঃ এর সেক্রেটারি আনসার আলী ডিলু জানান, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তিনি আখচাষি ও চিনিকলগুলো বাঁচানোর দাবি জানান। তিনি জানান, এভাবে চলতে থাকলে আখের অভাবে চিনিকলগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে মিলগুলোর হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারি বেকার হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও আখচাষি কল্যাণ সমিতি পাবনা সুগার মিলস্ লিঃ এর সভাপতি আলহাজ শাহজাহান আলী বাদশা ওরফে পেঁপে বাদশা বলেন, সাংসারিক সমস্যার পাশাপশি তারা টাকার অভাবে অন্য ফসল পর্যন্ত চাষবাস করতে পারছেন না।

তারা জানান, এখন আখ চাষের পরিচর্যা করার জন্য বাড়তি টাকা দরকার হচ্ছে। অথচ এ সময়ে তারা চার মাস মাস আগে চিনিকলে আখ বেঁচেও টাকা পাচ্ছেন না। অর্থাভাবে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। তিনি চলতি মুজিব বর্ষে ৫০০ কোটি টাকার আপদকালীন তহবিল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।

পরে আখচাষিদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী বরাবর করা এসব দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি পাবনা জেলা প্রশাসকের কাছে দেন।

একে জামান/এমএএস/এমকেএইচ