এখন থেকে নোয়াখালীতেই হবে করোনা পরীক্ষা
অনেক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে উদ্বোধন হলো মনিকুলার ল্যাবরেটরি ফর কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস পরীক্ষার ল্যাব। রোববার বিকেলে কলেজের ৬ষ্ঠ তলায় এ ল্যাব উদ্বোধন করেন নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আব্দুস ছালাম, নোয়াখালী জেলা শাখার স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ফজলে এলাহী খান এনাম, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, বিএমএ নোয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি ডা. এম এ নোমান প্রমুখ।
আজ দুটি ডেমো নমুনা টেস্টের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ল্যাবের কার্যক্রম। আগামী তিন থেকে সাতদিন চলবে এ ডেমো টেস্ট। এরপরই মূলত রোগীর নমুনা সরাসরি এই ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে। প্রতিদিন এ ল্যাবে ৯৫টি করে নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। নোয়াখালী জেলা ছাড়াও আশপাশের লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর জেলার সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে এ ল্যাবে। ফলে করোনা পরীক্ষার জন্য আর দশ দিন অপেক্ষা করতে হবে না এ অঞ্চলের মানুষকে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রত্যেক উপজেলা থেকে টেকনোলজিস্টরা নমুনা সংগ্রহ করবেন। নমুনা নির্দিষ্ট অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজে আসবে এবং সর্বাধুনিক সংযোজিত থার্মোফিসার আরটিপিসিআর ও বায়োসিস্টেম মেশিনে পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্টদের পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দেয়া হবে। সরাসরি কলেজে কোনো নমুনা সংগ্রহ করা হবে না।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আবদুস ছালাম জানান, আমরা তড়িঘড়ি করে কোনো কাজ করতে চাই না। বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট যাতে দিতে পারি সে লক্ষ্যে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে মেডিকেল কলেজে এই ল্যাবের জন্য আটটি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, টেকনোলজিস্টসহ আটজন করে থাকবেন। তারা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি কর্তব্যরতদের সর্বোচ্চ সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় তাদের কলেজে করোনা পরীক্ষার আগ্রহের কথা জানিয়ে। ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস ও সিভিল সার্জন ডা. মমিনুর রহমান নোয়াখালীতে আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে করোনা ল্যাব স্থাপনের দাবি জানান। পরবর্তীতে ১৫ এপ্রিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী মৌখিকভবে জেলা সিভিল সার্জনকে ভিডিও কনফারেন্সে করোনা ল্যাব স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে বলেন এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরটিপিসিআর মেশিন এনে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেন।
কিন্তু এরই মধ্যে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কেও আরটিপিসিআর মেশিন সক্রিয় করা সাপেক্ষে করোনা র্যাব চালুর অনুমতি প্রদান করে। একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানকে করোনোভাইরাস পরীক্ষার অনুমতি দেয়ায় খানিকটা জটিলতা সৃষ্টি হয়। পরে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদী স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী ও জেলা প্রশাসক তন্ময় দাসের হস্তক্ষেপে গত ২৭ এপ্রিল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইসকো কোম্পানির একটি আরটিপিসিআর মেশিন প্রদান করেন। মেশিনটি মেডিকেল কলেজে স্থাপন করতে গিয়ে পুরোপুরি সেটিং না হওয়ায় অবশেষে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ওএমসি সংস্থা থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকার নতুন আরটিপিসিআর’র সামগ্রিক যন্ত্রপাতি এনে সংযোজন করে।
মিজানুর রহমান/এফএ/পিআর