জনবল সংকটে ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা
১৯৭০ সালে ৫০টি শয্যা নিয়ে শুরু হয় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের যাত্রা। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগের চাহিদায় ২০০৩ সালে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয় হাসপাতালটি। বর্তমান সময়ে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না এর কার্যক্রম। নানা সমস্যার জালে জড়িয়ে পড়েছে হাসপাতালটির অবকাঠামোগত ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বিষয়টি। জনবল ও ওষুধ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দক্ষিণপাশের দো-তলা ভবনের নিচ তলায় রয়েছে জরুরি বিভাগ, এক্স-রে বিভাগ, প্যাথলজি, তথ্যকেন্দ্র, ডিসপেনসারি, টিকেট কাউন্টার, ডাইরিয়া বিভাগ, সমাজসেবার কার্যক্রম, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ ও যক্ষা বিভাগ। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে বর্হিবিভাগ, অফিস ও স্টোর। দক্ষিণে হাসপতালের তত্ত্বাবধায়কের একতলা বাস ভবনের কাজ নির্মানাধীন রয়েছে। উত্তর দিকের তিনতলা বিশিষ্ট ভবনটিতে রয়েছে রোগীরা। পশ্চিম দিকের দোতলা ভবনটি আইসুলোশন বা সংক্রামণ বিভাগের চিকিৎসার জন্য নির্মাণাধীন রয়েছে।
পূর্ব দিকে রয়েছে চারতলা বিশিষ্ট একটি ডাক্তার কোয়াটার ভবন। দোতলা কনসালটেন্ট কোয়াটার। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য দুটি ভবন রয়েছে। যার একটি চারতলা এবং আরেকটি তিনতলা বিশিষ্ট। পাশেই রয়েছে একটি অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজ। হাসপাতালের প্রধান ফটকের পাশেই পশ্চিম দিকে রয়েছে মসজিদ ও সামনে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মো. মোফাজ্জল হোসেন জানান, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও এখানে গড়ে প্রতিদিন ১৫০ জনের অধিক কখনো ২০০ থেকে ২৫০ জনের মতো রোগী স্বাস্থ্য সেবা নিতে হাসপাতালে অবস্থান করে। বেড খালি না থাকায় বেশিরভাগ রোগীই মেঝেতে চিকিৎসাধীন থাকে। ১০০ শয্যার হিসেব করলেও আমাদের এই হাসপাতালে বর্তমানে ৪২ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। কিন্তু এখানে চিকিৎসকের পোস্ট আছে ১৮টি আর কর্মরত আছেন ১০ জন।
তিনি আরো জানান, ১০০ শয্যার হাসপাতাল অনুযায়ী আমাদের জনবল, ওষুধ এবং আবাসন ব্যবস্থার সংকট রয়েছে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের স্টোরের তথ্যানুযায়ী, হাসপতালে বর্তমানে প্রায় ৪৬ রকমের ট্যাবরেট, ১৪ প্রকারের ক্যাপসুল, ৪৪ ধরনের ইনজেকশন ও ১৬ প্রকারের সিরাপ দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে ১০০ শয্যার অনুপাতে ওষুধ বরাদ্দ আসে। কিন্তু রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ। হাসপতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ প্রয়োজন। সরকারি ওষুধের গায়ে লাল সবুজের দাগ দেয়া থাকে তাই বাইরের কোনো ফার্মেসিতে সরকারি ওষুধ পাওয়া যায় না। এজন্য বিক্রি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের নাসিং সুপারভাইজার হোসনে আরা বেগম ও সেলিনা বানু জানান, বর্তমানে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ২ জন নাসিং সুপারভাইজার, ২২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং ৯ জন স্টাফ নার্স দিন রাত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা হলেও এখানে ১ জন নার্স প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ২৭০ জন পুরুষ, নারী ও শিশুকে সেবা দিচ্ছেন।
তারা আরো জানান, প্রতিদিন ৩টি শিফটে নার্সরা সেবা প্রদান করেন। প্রথম শিফটে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২ টা, দ্বিতীয় শিফটে দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা এবং পরবর্তী শিফটে রাত ৮ টা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগী জানান, হাসপাতালের খবার, পানি ইত্যাদি খাাবারের অযোগ্য আর বাথরুম মানুষের ব্যবহারের অযোগ্য। তবে নার্স আপারা সব সময় আমাদের খোঁজ খবর নেন। সকালে একবার ডাক্তার আসে। ডাকাডাকি করলে নার্সরা আসে। হাসপাতালে বিদ্যুৎ এর অবস্থা ভালো কিন্তু পানি, খাবার ও বাথরুম ব্যবহারের অযোগ্য।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের স্টাফ নার্স ইনচার্জ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের রোগীদের সেবায় আমরা প্রতিনিয়ত নিয়োজিত রয়েছি। হাসপাতালে বর্তমানে ৩ জন ঝাড়ুদার রয়েছে। কিন্তু ১০০ শয্যার হাসপাতাল অনুযায়ী ১০-১২ জন সুইপার, ঝাড়ুদার প্রয়োজন। আর জরুরি বিভাগের জন্য সেলাই করার সুঁচ, সুতা, গজ, ব্যান্ডেস, পরিষ্কারক এন্টিসেপটিকসহ জরুরি ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজন।
রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবুল হক জানান, আমি হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালের অবকাঠামোর কিছু ত্রুটি আছে যার ফলে রোগীদের শয্যা সংখ্যা যেভাবে করা দরকার সেভাবে করতে পারছি না। পুরুষ ওয়ার্ড, গাইনি ওয়ার্ড ও ডায়েরিয়া ওয়ার্ডেও অবকাঠামো বাড়ানো যেত।
তিনি আরো বলেন, আমাদের যে ১০০ শয্যার হাসপাতাল কিন্তু জনবল ডাক্তার, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ওইভাবে সৃষ্টি হয় নাই। ১০০ শয্যার হাসপাতালে ৪২ জন ডা থাকার কথা থাকলেও এই হাসপাতালে ৫০ শয্যার জনবল এখন আমাদের নাই। ১৮ জনের মধ্যে ১০ জন ডাক্তার আছে। নার্স মোটামুটি ভালই আছে। ১০০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী কিছু প্রয়োজন।
প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী হাসাপাতালে আসে এবং ১৩০ থেকে ১৪০ জন রোগী ভর্তি থাকে। হাসপাতালে এখন পর্যাপ্ত ওষুধ আছে। ওষুধের কোনো ঘাটতি নাই। হাসপাতালের জনবল ও সেবার মান বৃদ্ধির জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
এসএস/এমএস