ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পোদাউলিয়া গ্রামে এখন আর কারো বিয়ে ভাঙবে না

প্রকাশিত: ০৩:১০ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০১৫

৬০ বছরে রাষ্ট্র যা পারেনি ছয় দিনে ওরা তা করে দেখিয়ে দিল। গ্রামের সাধারণ মানুষের ঐক্য, অদম্য উৎসাহ, স্বেচ্ছাশ্রম ও বাইরের কারো সাহায্য সহযোগিতা বাদে চলাচলের অনুপোযোগী কাঁদামাটির চার কিলোমিটার রাস্তায় ইট বিছানোর কাজ চলছে। শেষ হয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটারের কাজ। গ্রামের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কাজকর্ম।

অবহেলিত এই জনপদ হলো যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের বড়-পোদাউলিয়া গ্রাম। গ্রামটি শস্য ভাণ্ডারে পরিপূর্ণ এক সমৃদ্ধ গ্রাম। যেখানে বসবাস করছে সহজ সরল, শিক্ষিত, মার্জিত মানুষগুলো, যারা জম্মের পরপরই সবকিছুর পরিবর্তন দেখেছে। কিন্তু পরিবর্তন দেখেনি গ্রাম থেকে বেরুনোর একমাত্র কাঁদামাটির ওই রাস্তাটির। ফুলের স্বর্গরাজ্য হিসেবে খ্যাত ঝিকরগাছার গদখালি। তারই অদূরে সারাদেশের মানুষের কাছে গর্ব হিসেবে আত্মপ্রকাশ পেতে যাচ্ছে বড়-পোদাউলিয়া গ্রামবাসী। তাদের অদম্য সাহস, আন্তরিকতা, গ্রামের প্রতি মমতা, ভালোবাসা দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। গ্রামটিতে গিয়ে এসবের সত্যতা পাওয়া গেছে।

jesor

বড় পোদাউলিয়া গ্রামের মানুষের যাতায়াতের রাস্তাগুলো একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী। ওই গ্রাম থেকে বেরিয়ে পাকারমুখ (পাকা রাস্তা) দেখতে যেতে হবে অন্তত চার কিলোমিটার। বাগআঁচড়া, বাঁকড়া, ছোট পোদাউলিয়া, খাটবাড়িয়া গ্রামে গেলে পাকারাস্তা পাওয়া যাবে। তবে অন্তত চার কিলোমিটার হাটতে হবে। আর এই চার কিলোমিটার রাস্তাটি সম্পূর্ণ কাদায় ভরা।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গনি জানান, এই অসাধ্য কাজটি পোদাউলিয়ার সর্বস্তরের জনগণের সাথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাটি করেন ওই গ্রামের ছেলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড: একেএম আকতারুল কবীর। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে নিরলসভাবে রাস্তাটির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
 
ডক্টর একেএম আকতারুল কবীর বলেন, ওরা আমার নাম বললেও কৃতিত্ব মূলত গ্রামবাসীর। যশোর এমএম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ওই গ্রামের ছেলে নুর হোসেন এবং স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গনি সমাজের সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজটি এগিয়ে নিচ্ছেন। আমি এই ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে কাজটাকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করছি। তাদের এবং ওই গ্রামের সাধারণ জনগণের সহযোগিতা ছাড়া অন্তত কারো পক্ষে এতদূর অগ্রসর হওয়া সম্ভবপর ছিল না।

jesor

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে দুজন করে নুর হোসেন ও আব্দুল গনি থাকলে আমাদের দেশের অগ্রযাত্রাকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আমি দাবি রাখবো গ্রাম উন্নয়নের জন্য কখনও কোনো পদকের প্রচলন করা হলে ‘বড়-পোদাউলিয়া’ গ্রামের জনগণকে তা প্রদান করা সমীচীন হবে।

সাবেক ইউপি মেম্বার জাহান আলি সরদার বলেন, গ্রামটিতে পাঁচ হাজার লোকের বসবাস। একটি দাখিল মাদ্রাসা, একটি প্রাইমারি স্কুল, চারটি মসজিদ ও দুইটি হেফজখানা ও এতিমখানা রয়েছে। সরকারি কোনো অর্থ সহযোগিতা বাদেই গ্রামবাসী হেফজখানা ও এতিমখানা পরিচালনা করে আসছেন। এই গ্রামের আড়াই’শ ছেলে বিদেশে থাকে যারা আমাদের কাজে সার্বিক সহযোগিতা করছেন।

jesor

গ্রামের প্রবীন তিনজন মাতব্বর আব্দুল আজিজ (৭০), ইসাহক দপ্তরী (৭০) ও নুর ইসলাম মোড়ল (৬৫) বলেন, বর্ষার সময় এই গ্রামের ছেলেমেয়েরা কাদা দিয়ে অন্তত ৫/৭ কিলোমিটার দূরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষালাভ করছে। তারা উচ্চশিক্ষিত হলেও গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ভালো জায়গায় বিয়ে করতে পারে না। দেখা দেখি হয় কিন্তু রাস্তার কারণে বিয়ে ভেঙে যায়। তাই যুবকদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমরা স্বদ্যোগে রাস্তায় ইট বসানোর কাজ করছি।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে স্থানীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান ধাবক বলেন, রাস্তাটির কার্পেটিং এর জন্য তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু নিয়মানুসারে কাজটি হতে সময় লাগবে। তবে গ্রামবাসী যা করছে তা দেশে একটি রেকর্ড সৃষ্টি করবে বলে মনে করি। আমি তাদের এই কাজকে সাধুবাদ জানাই।

এমএএস/এমএস