করোনাজয়ী পুলিশ সদস্য বললেন মায়ের গায়ে হাত তুলেছে তারা
৮ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত আহসান হাবিব বগুড়ার আদমদীঘির সাঁওইল গ্রামের বাড়িতে আসেন। ঢাকাফেরত হওয়ায় সেদিনই তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এর মধ্যে হালকা জ্বর-কাশি থাকায় ১৩ এপ্রিল আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা পরীক্ষা করাতে যান তিনি।
তিনদিন পর ১৬ এপ্রিল রাতে রিপোর্ট আসে তার করোনা পজিটিভ। ফলে ওই দিন রাতেই পুরো উপজেলা লকডাউন করা হয়। বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে তাকে ভর্তি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ২১ এবং ২৩ এপ্রিল আবারও তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
পরপর দুটি পরীক্ষায় নেগেটিভ আসায় ২৫ এপ্রিল বিকেল ৩টার দিকে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি ফিরে যান। পরের দিন রোববার বিকেল ৪টায় ফেসবুক লাইভে এসে করোনা জয়ের কথাগুলো জানান ২৯ বছর বয়সী পুুলিশ কনস্টেবল আহসান হাবিব।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। মনে সাহস রেখে চিকিৎসকের দেয়া ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত গরম পানি খেতে হবে। গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে ঘন ঘন গড়গড়া করতে হবে।
ওষুধের পাশাপাশি নিয়মিত গরম পানি পান করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সহকর্মীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে নিয়মিত গরম পানি খেতে এবং গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে গারগিল করার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমি ঘন ঘন গরম পানি খেয়েছি এবং গারগিল করেছি।
করোনার সময়ের কষ্টের কথা তুলে ধরে আহসান হাবিব বলেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে আমার যতটা না খারাপ লেগেছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি নিজ এলাকার মানুষের আচরণে। করোনা পজিটিভ শোনার পর তারা আমার বাড়িতে মল ছুড়ে মেরেছে। এমনকি আমার মায়ের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেনি তারা।
তবে আন্তরিকতা নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেয়ায় করোনা আইসোলেশন ইউনিট বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শফিক আমিন কাজলের প্রশংসা করেছেন তিনি। নিজ বাহিনীর অভিভাবক হিসেবে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়ার প্রতি।
কনস্টেবল আহসান হাবিব আরও বলেন, যেহেতু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই আমার জ্বর ছিল তাই আগের চিকিৎসকের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী আমি ডোকোপা (ডোক্সোফাইলিন), ফেনাডিন (ফেক্সোফেনাডিন), নাপা (প্যারাসিটামল) ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়েছি। এগুলো শেষ হলে হাসপাতাল থেকে দেয়া ওষুধগুলো খেয়েছি। তাছাড়া হাসপাতালে অ্যাজিথ্রোমাইসিন (জিম্যাক্স), মন্টিলুকাস্ট (মন্টিকাশ), প্যারাসিটামল ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করতে দেয়া হয়েছিল।
এলাকাবাসীর আচরণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমি একজন দায়িত্বশীল মানুষ হওয়ায় গ্রামে আসার পর থেকে বাড়ির বাইরে যাইনি। শুধু একদিন আমি হাতে গ্লাভস পরে মোটরসাইকেল নিয়ে ওষুধের দোকানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩ ফুট দূর থেকেই ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরেছিলাম। কিন্তু যখন আমার রিপোর্ট পজিটিভ আসলো তখন গ্রামের লোকজন নানাভাবে নির্যাতন শুরু করল। আমি আইসোলেশন সেন্টারে যেতে রাজি হওয়ার পরও তারা লাঠিসোটা নিয়ে আমার বাড়ি ঘেরাও করল। একপর্যায়ে তারা আমার বাড়িতে মল ছুড়ল। আমার মায়ের গায়ে হাত তুলল।’
আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, পুলিশ কনস্টেবল আহসান হাবিব বগুড়ায় হাসপাতালে ভর্তি হতে রাজি ছিলেন। কিন্তু তারপরও গ্রামের লোকজন সংক্রমিত হওয়ার ভয় থেকে বার বার উত্তেজিত হয়ে পড়ছিলেন। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছি। বর্তমানে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে রয়েছেন।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে করোনা জয়ীর তালিকায় আহসান হাবিবের নাম দ্বিতীয় নম্বরে থাকলেও তিনি বগুড়া জেলার প্রথম করোনা জয়ী ব্যক্তি।
এএম/এমএস