রহস্যে ঘেরা মেডিকেল ছাত্রী বিউটির আত্মহত্যা
খুলনা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী আরমনি সুলতানা বিউটির অত্মহননের বিষয়টি এখনো রহস্যাবৃত্তই রয়ে গেছে। কলেজের একজন শিক্ষক ও একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন এমন কথা খুলনায় টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য একাধিক মহল জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সবকিছু এখন পুলিশের উপর নির্ভর করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বিউটির মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত না করতে বৃহস্পতিবার ইন্টার্নি চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিক্ষোভ করে। তারা ময়নাতদন্ত না করতে দফায় দফায় কলেজ ও পুলিশ প্রশাসনের উপর চাপ প্রয়োগ করে।
তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ নিতে আগ্রহী ছিলেন নিহতের ভাই মোহা. ইকবাল। কিন্তু বিশেষ কিছু আলামত ও জনশ্রুতির কারণে পুলিশও ঝুঁকি নিতে চায়নি। যে কারণে পুলিশ শেষ অবধি ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছে।
বুধবার দুপুরে খুমেকর কবি বেগম সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাসের ৪১১ নম্বর কক্ষে অ্যাপ্রোন গলায় পেচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে আত্মহত্যার খবর পেয়ে ওই রাতেই খুলনা পৌঁছেন বিউটির দুই ভাই ইকবাল হোসেন ও মোশাররফ হোসেন। রাতে তারা মেডিকেল শিক্ষার্থী ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ নেয়ার চেষ্টা করেন। যার অংশ হিসেবে বুধবার গভীর রাতে জেলা প্রশাসনের অনুমতিও নেয়া হয়। মরদেহ নেয়ার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সও ঠিক করে রাখা হয়। কিন্তু পুলিশ বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ ছাড়তে নারাজ হওয়ায় বিপত্তি ঘটে।
সূত্র জানায়, পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেবার হুমকি দেখিয়ে কলেজের শিক্ষক মৃনাল তার সঙ্গে একাধিকবার দৈহিকভাবে মিলিত হন। এছাড়া কুষ্টিয়ার বাসিন্দা খুমেকের ইন্টার্নি চিকিৎসক শামীমও তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন বলে গত দুদিন কলেজ ও হাসপাতাল এলাকায় প্রচার হয়। তবে ঘটনার পর থেকে শামীম নিখোঁজ থাকলেও শিক্ষক চিকিৎসক মৃনাল রয়েছেন বহাল তবিয়তে। শারীরিক সম্পর্কের কারণে বিউটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন এমন ঘটনাও প্রচার হয়েছে।
সূত্র জানায়, মেডিকেল কলেজের সুনাম ক্ষুন্ন হবে এই আশঙ্কায় ছাত্রদের একটি অংশ ময়নাতদন্তে বাধা দেয়। তবে পুলিশের অনড় অবস্থানের কারণে কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ওয়াহিদ মাহমুদ ও সংযুক্ত কর্মকর্তা ডা. মুসলিমা ইয়াসমিন জুঁই ময়নাতদন্ত করেন।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব জাগো নিউজকে বলেন, পরিবারের দাবি অনুযায়ী ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ হস্তান্তরের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সেটি সফল হয়নি।
এদিকে, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা হলেও কেন ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ নেয়ার চেষ্টা করা হয় সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেছেন, কে-১৯ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থীর (যিনি বর্তমানে ইন্টার্নি চিকিৎসক হিসেবে খুমেক হাসপাতালের সার্জারি ইউনিট-১ এ কর্মরত) সঙ্গে বিউটির সম্পর্ক ছিল। বিউটির মৃত্যুর দিনেও তাকে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে রিক্সাযোগে যেতে দেখেছেন অনেকে।
তবে শিক্ষক চিকিৎসক মৃনাল সানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এটা একটা অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়। তার সুনাম ক্ষুন্ন করতেই তাকে বিউটির মৃত্যুর সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে। যার কোনো ভিত্তি নেই।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, আপাতত অপমৃত্যু মামলা হলেও ময়নাতদন্তের পর বোঝা যাবে যে কি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা কিছু আলামতের কারণেই ময়নাতদন্ত করিয়েছি। রিপোর্ট পাবার পরই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া সংগৃহীত আলামতগুলো গভীরভবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আলমগীর হান্নান/এমজেড/পিআর