শ্রমিকদের সইতে হলো সেই একই দুর্ভোগ
শিল্প নগরী গাজীপুরে হাজারো প্রতিষ্ঠানে কয়েক লাখ শ্রমিক জীবিকার সন্ধানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাজে নিয়োজিত ছিলেন। করোনাভাইরাসের শুরুতে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় বেশির ভাগ শ্রমিকই গাজীপুর ছেড়ে বাড়ি চলে যান। তবে এখন আবারও কারখানা খোলার খবরে তারা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা ও ভ্যানে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করছেন শ্রমিকরা।
আশরাফ উদ্দিন রমজানের প্রথম সেহরি খেয়ে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তার উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে রওনা দিয়েছেন। রিকশা-ভ্যানযোগে বিকল্প মাধ্যমে ভেঙে ভেঙে বেলা ২টার দিকে শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকায় পৌঁছেন।
তিনি জানান, গাজীপুর থেকে তার বাড়ির দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। এমনিতেই ১শ থেকে দেড়শ টাকা ভাড়ায় তিনি যাতায়াত করতেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ২০০ টাকা ভাড়ায় খোলা ট্রাকে করে তিনি বাড়ি গিয়েছিলেন। গতকাল (শুক্রবার) কারখানার সুপারভাইজারকে ফোন দিলে তিনি কারখানায় আসতে বলেন।
অপর শ্রমিক রাশেদুল এসেছেন জামালপুর থেকে। তিনি জানান, জামালপুর থেকে জয়দেবপুর আসতে তিনশ টাকার মতো গাড়ি ভাড়া দরকার হয়। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জৈনাবাজার আসতেই তার ৬০০ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি রাস্তা যেতে আরও ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা খরচ হবে।
এদিকে ত্রিশাল থেকে শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় এসেছেন তাসলিমা ও আরিফ। তারা জানান, কোথাও রিকশা ও ভ্যান আবার কিছু রাস্তা হেঁটে এ পর্যন্ত এসেছেন। এতে অতিরিক্ত ভাড়ার পাশাপাশি খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
টঙ্গী এরশাদনগরের উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে সকাল ৮টায় রওনা হয়েছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি এরশাদনগর এলাকায় একটি কারখানায় কাজ করেন। শুক্রবার বিকেলে সুপারভাইজার মোবাইল ফোনে কারখানায় আসতে বলেছেন। তিনি বাড়ি থেকে রওনা দেয়ার পর শুনছেন কারখানা নাকি বন্ধ থাকবে। এখন তিনিসহ অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন।
মাওনা এলাকার নোমান গ্রুপের একটি কারখানার সুপারভাইজার আমিনুল হক বলেন, কর্তৃপক্ষ কারখানা খোলার বিষয়ে গতকাল তাদের জানিয়েছিল। তিনি সকালে টঙ্গী থেকে মাওনা এলাকায় আসলে বাড়ির মালিকরা বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না তাকে।
এদিকে লকডাউনের মধ্যেই শ্রমিকরা কাজে ফেরায় স্থানীয় বাড়ির মালিক অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন। মাওনা উত্তরপাড়া এলাকার স্কুলশিক্ষক আব্দুল হান্নান সজল জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় করোনার প্রাদুভার্বের পর থেকেই সরকারের নির্দেশ মতো আমাদের এলাকায় লকডাউন কার্যকর রয়েছে। এমন অবস্থায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা এলাকায় প্রবেশ করায় নিরাপত্তার সমস্যা তৈরি হতে পারে। অনেক বাড়ির মালিক শ্রমিকদের বাড়িতে প্রবেশ করতে দেবে না। হঠাৎ করে শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে চলে আসায় ভোগান্তি বাড়বে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, শর্ত সাপেক্ষে শ্রমিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে আমরা একটি সরকারি নির্দেশ পেয়েছি। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ তার।
এমএএস/জেআইএম