কৃষকের পাশে শিক্ষার্থী-ছাত্রলীগ-যুবলীগ
হাওরপ্রধান জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম সুনামগঞ্জ। এখানে অর্ধেকের বেশি মানুষের প্রধান পেশা কৃষিকাজ। বোরো আবাদ কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। এবার সুনামগঞ্জের হাওরে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে শ্রমিক সঙ্কটে পাকা ধান ঘরে তুলছে পারছেন না কৃষক।
এ অবস্থায় কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও প্রশাসনের লোকজন। কৃষকের মাঠে ধান কাটছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, প্রশাসনের লোকজন এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ নানা রাজনৈতিক সংগঠন। করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে তাদের পাশে পেয়ে সাহস পাচ্ছেন কৃষকরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুই সপ্তাহ টানা বৃষ্টিপাতসহ আগাম বন্যার আশঙ্কা রয়েছে সুনামগঞ্জে। ফলে হাওরে উৎপাদিত ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে রয়েছে শ্রমিক সঙ্কট। সেই সঙ্গে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কায় প্রশাসনের অনুরোধে মাঠে নেমেছে সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। স্বেচ্ছায় হাওরে কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছে তারা।
এরই মধ্যে কৃষকদের ধান কাটায় উৎসাহ দিতে দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে মাঠে নেমেছেন সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের এমপি শামীমা শাহরিয়ার। তিনি কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন।
এছাড়া হাওরে হাওরে গিয়ে ধান কাটছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, তাহিরপুর উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা। তাদের পাশাপাশি যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা চপলের নির্দেশে হাওরে ধান কাটছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
একই সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে ধান কাটছেন। পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও হাওরে গিয়ে কৃষকদের ধান কাটছে।
সদর উপজেলার কাটাইল ইউনিয়নের ডাকুয়া হাওরের কৃষক আমিনুল হক বলেন, শ্রমিক সঙ্কটের কারণে ধান কাটতে পারছিলাম না। ফলে ধানগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ অবস্থায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছেন। আমি এখন শঙ্কামুক্ত। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, জনতা উচ্চ বিদ্যালয়, বাগলী উচ্চ বিদ্যালয়, এমএ জাহের আলী উচ্চ বিদ্যালয়, ট্যাকেরঘাট স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কৃষকের ধান কাটায় যোগ দিয়েছে।
এমএ জাহের উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মোরছালিন আহমদ জানায়, কৃষকরা দেশের প্রাণ। তারা আমাদের প্রতি বছর খাবারের জোগান দেন। এবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যদি আমরা তাদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে খাদ্যঘাটতি দেখা দেবে। এজন্য হাওরে গিয়ে কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছি আমরা।
সুনামগঞ্জের হাওরে নেতাকর্মীদের নিয়ে যুবলীগ, কৃষক লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্কাউট সদস্যদের ধান কাটতে দেখা গেছে।
কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে ধান কাটতে যাওয়া সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের এমপি শামীমা শাহরিয়ার বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি মনে করি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমরা মাঠে কাজ করছি। বিশেষ করে আমাদের একটাই চিন্তা; কৃষকরা ফসলগুলো ভালোভাবে ঘরে তুলুক। কৃষকরা যদি ধান ঘরে তুলতে পারেন তাহলে খাদ্যের অভাব দেখা দেবে না। সুনামগঞ্জে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে খাদ্যের অভাব কেটে যাবে। আসুন আমরা সবাই কৃষকের পাশে দাঁড়াই।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দীপংকর কান্তি দে বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় আমরা জেলার সব উপজেলার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অনুরোধ করেছি হাওরে ধান কাটার। আমরাও হাওরে হাওরে গিয়ে ধান কাটছি। আমাদের মূললক্ষ্য বন্যার আগে ধানগুলো কৃষকের ঘরে তুলে দেয়া।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, বন্যার সতর্কবার্তা রয়েছে। তাই কৃষকরা যাতে দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পারেন সেজন্য প্রশাসনের কমকর্তারা মাঠে রয়েছেন। তারা কৃষকদের ধান কাটতে সহযোগিতা করছেন। বাইর থেকে শ্রমিক এলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি খাবার দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, এ বছর সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় দুই লাখ ২০ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ মেট্রিক টন।
এএম/এমকেএইচ