ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বড় ধরনের সংঘাত রুখতেই জানাজায় বাধা দেয়নি পুলিশ

জেলা প্রতিনিধি | ব্রাহ্মণবাড়িয়া | প্রকাশিত: ০২:১৬ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২০

ইসলামি বক্তাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে এই আলেমের ভক্ত-অনুসারী রয়েছেন। ফলে তার জানাজার নামাজে বিপুল জনসমাগম হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন সবাই।

কিন্তু চলমান করেনাভাইরাস দুর্যোগের কারণে সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে তার জানাজার নামাজ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন থাকা সত্ত্বেও কীভাবে বিপুল জনসমাগম হলো এবং কেনই বা জনসমাগম ঠেকাতে পুলিশ কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি সেটি নিয়েও সমালোচনার ঝড় বইছে।

তবে সেদিনের প্রেক্ষাপট বিবেচেনায় পুলিশ বাধা দিলে বড় ধরনের সংঘাত হতে পারত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর সেই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে। ক্ষোভের আগুনে জ্বলে উঠত সমগ্র আলেম সমাজ। মূলত এই সংঘাত এড়াতে জানাজায় বাধা দেয়নি পুলিশ।

গত শনিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বেড়তলা এলাকায় জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা মাঠে জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। মাঠে জায়গা না হওয়ায় মাদরাসা সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকায় জানাজার নামাজে অংশ নেয় লাখো মানুষ

মূলত ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি থেকেই জানাজার নামাজে এই বিপুল জনসমাগ ঘটে। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই পুলিশ সদর দফতর থেকে সরাইল থানা পুলিশের ওসি সাহাদাত হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়।

এরপর রোববার (১৯ এপ্রিল) সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এসএসপি) মাসুদ রানা ও সরাইল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল হককে প্রত্যাহার করা হয়।

গত শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মার্কাসপাড়ায় নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারী। ওই দিন রাতেই মৃত্যুর সংবাদ মাইকিং করে জানানো হয়। পাশাপাশি ফেসবুকেও প্রচার করা হয়। ফলে জানাজায় ঢল নামে মানুষের।

জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্র জানিয়েছে, মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর মৃত্যুর খবর জানার পর বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারকে তাৎক্ষণিক অবগত করা হয়। কোথায় জানাজা হবে সেই তথ্যও জানিয়ে দেয়া হয় সরাইল থানার ওসি সাহাদাত হোসেনকে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান নিজেই ওসি সাহাদাতকে ফোন করে জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসায় গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। রাতেই ওসি সাহাদাত মাদরাসায় গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষও আশ্বস্ত করে জনসমাগম না করে স্বল্প পরিসরে সমাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জানাজার নামাজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার।

এর ফলে বিষয়টিকে ‘হালকাভাবে’ নিয়ে জানাজার দিন সকাল সোয়া নয়টায় মাত্র ২০ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে জানাজাস্থলে যান ওসি সাহাদাত। তখনও পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য পাঠাতে বলেননি তিনি। যদিও কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি বলে দাবি করেছেন ওসি। পাশাপাশি বিষয়টি ‘হালকাভাবে’ নেয়ার কারণ হিসেবে মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীকে না চেনার দাবি করেন তিনি।

পুলিশের আরকেটি সূত্র জানায়, জানাজার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাইরে থেকে আগতদের কয়েকটি গাড়ি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ টোলপ্লাজা চেকপোস্টে আটকে দিলে ক্ষেপে যান তারা। এ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। পরবর্তীতে বাধ্য হয়েই তাদের জানাজায় আসতে দেয়া হয়। বিজয়নগর উপজেলার সাতবর্গ চেকপোস্টেও একই রকম ঘটনা ঘটে।

নাগরিক সংগঠনের নেতারা মনে করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রশাসন ও পুলিশ কঠোর অবস্থানে গেলে বড় ধরনের সংঘাত হতে পারত। সেই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের উচিত ছিল তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি তাদের শীর্ষপর্যায়ে অবগত করা। জানাজায় জনসমাগমের বিষয়টি পুলিশের জন্য উভয়সংকট ছিল। বাধা না দেয়াটা যেমন তাদের দোষ, তেমনি বাধা দিলে যে পরিস্থিতি তৈরি হতো সেটি থেকেও রেহাই পেতো না পুলিশ।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে ওই অবস্থায় পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ হতো এবং ব্যাপক প্রাণহানির সম্ভাবনা ছিল। পরবর্তীতে এটি অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ত।

আজিজুল সঞ্চয়/এএম/জেআইএম