ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বৈশাখ লাগেনি এবার পাল পাড়ায়

জেলা প্রতিনিধি | গাইবান্ধা | প্রকাশিত: ০৬:৫৮ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০২০

কেবল বৈশাখ উপলক্ষেই দিনরাত পরিশ্রম করে খেলনা হাতি, ঘোড়া, পুতুল তৈরি করেন মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু গাইবান্ধার সাত উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পাল সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার পরিবারের কাছে এবারের পহেলা বৈশাখ ইতিহাস হয়ে থাকবে। করোনার কারণে বৈশাখের সব মেলা বন্ধ। সরকারিভাবেও কোনো সহায়তা পাননি তারা। ফলে অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন এ জেলার পাল সম্প্রদায়ের মানুষরা।

পহেলা বৈশাখের এমন দিনে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ-মহিমাগঞ্জ মহাসড়কের কোচার শহরের পালপাড়া যেন নীরব। নেই বাঁশির সুর আর ঠ্যালাগাড়ির শব্দ। সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। প্লাস্টিক সামগ্রী বাজার দখল করেছে অনেক আগেই। এতেই কপাল পুড়েছে গাইবান্ধার সাত উপজেলার কয়েক হাজার মৃৎশিল্পীর। মাটির খেলনা বাজারে বিক্রি কম হওয়ায় এখন দইয়ের সড়া, ফুলদানি, টবসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।

বৈশাখি শাড়ি আর গহনা পরে চার বছরের শিশু জবা বায়না ধরেছে বৈশাখি মেলায় যাবে। বাবা মোদন চন্দ্র পাল মেয়েকে কখনও কোলে নিয়ে আবার কখনও কাঁধে নিয়ে ঘুরছেন পাল পাড়ার অলগলিতে। কিন্তু জবার বায়না থামে না। কারণ এ বছর বৈশাখি মেলা নেই।

৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ ওয়াকিল চন্দ্র পাল বলেন, বাপ-দাদার ঐতিহ্য মনে প্রাণে ধারণ করে কাজ করছি। কিন্তু কেউ আসে না খোঁজ নিতে। স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বাররা ত্রাণ দেয়া তো দূরের কথা উঁকি দিতেও আসে না। অভাবের সংসারে ধারদেনা করেই চলতে হয়।

Pal-para

গোবিন্দগঞ্জ কোচার শহরের রিপন কুমার পাল জানান, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষদের ত্রাণ সামগ্রী দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই সম্প্রদায়ের পাশে কেউ আসেনি।

৫৫ বছর বয়সী বৈদ্যনাথ পাল বলেন, মাটির হাঁড়ি-পতিলের চাহিদা কমে গেছে। বাপ দাদার পেশা ছাড়তে পারছি না বলেই লোকসান হলেও জীবন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু করোনাভাইরাসে বৈশাখি মেলা বন্ধ থাকায় আমাদের আর বাঁচার উপায় নেই।

সরকারি কোনো সহযোগিতা না মেলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে কোচারশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের মুঠোফোনে কল করলে ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

তবে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামকৃষ্ণ বর্মণ জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার জনসংখ্যা ৭ লাখের উপরে। ত্রাণ সামগ্রীর পরিমাণ মাত্র ৮ হাজার। এমন পরিস্থিতিতে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া সম্ভব নয়। তবুও পালপাড়ায় হতদরিদ্র মানুষদের ত্রাণ দেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলব।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) গাইবান্ধার ব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জুনায়েদ জানান, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মৃৎশিল্পীদের সাহায্য করা হবে। এছাড়াও গোবিন্দগঞ্জ কোচারশহর মৃৎশিল্পীদের ত্রাণ সহযোগিতার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জাহিদ খন্দকার/এফএ/পিআর