ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে গোপনে লক্ষ্মীপুরে শতাধিক মানুষ

জেলা প্রতিনিধি | লক্ষ্মীপুর | প্রকাশিত: ১১:১৭ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২০

গত এক সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জ থেকে শতাধিক ব্যক্তি লক্ষ্মীপুরে এসেছেন। এর মধ্যে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রায় ৫০ জনকে খুঁজে বের করে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তবে এখনও অন্যরা আত্মগোপনে আছেন। এর মধ্যে অনেকেই পাড়া-মহল্লায়, হাটবাজারে অবাধে বিচরণ করছেন। এতে আতঙ্ক বাড়ছে পুরো জেলাব্যাপী। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা জেলার রামগঞ্জ ও রামগতিতে দুই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

সচেতন মহলের ভাষ্যমতে, গত তিনদিন ধরে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চাঁদপুর লকডাউন। নারায়ণগঞ্জ থেকে সড়কপথে লক্ষ্মীপুরে আসার মাধ্যম এই জেলাগুলো। কয়েকদিন ধরে করোনার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জে। এতে জেলা প্রশাসন লকডাউন করে দেয়। সেখানে থাকা আতঙ্কিত লোকজন গোপনে এলাকা ছাড়তে শুরু করেন। নৌপথে চাঁদপুর হয়ে হাইমচরের ইচলী এবং লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আসা যায়।

নারায়ণগঞ্জে মৃত এক যুবকের মরদেহ নদীপথে এনে রায়পুরের চরবংশীতে দাফন করা হয়। তার করোনার উপসর্গ ছিল বলে প্রশাসন কয়েক বাড়ি লকডাউন করে দেয়। এক জেলার মানুষ যেন অন্য জেলায় যাতে না যেতে পারে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। লক্ষ্মীপুরে প্রবেশের প্রত্যেকটি স্থানে চেকপোস্ট বসানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন নেই। দায়সারা কার্যক্রম চলছে। সোমবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে এমন ভাষ্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগও ব্যক্ত করেছেন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী গাড়ি এবং ট্রলারযোগে কৌশলে রোগীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে শতাধিক ব্যক্তি লক্ষ্মীপুরে এসেছেন। এজন্য লক্ষ্মীপুরসহ চারটি জেলা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

১০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে এক যুবক স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন। খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ওই যুবকের নমুনা সংগ্রহ করে। তবে পালিয়ে গেছেন তার স্ত্রী-সন্তান। এ ঘটনায় ৮ পরিবারকে লকডাউন করে প্রশাসন।

অন্যদিকে জেলার রামগঞ্জের এক গার্মেন্টস কর্মী ও রামগতিতে তাবলিগ জামায়াতে গিয়ে এক বৃদ্ধ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর থেকেই আইইডিসিআর লক্ষ্মীপুরকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। সোমবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে লক্ষ্মীপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন চলছে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, করোনা পরীক্ষার জন্য লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১৮৭ ব্যক্তির নমুনা পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭৭ জনের ফলাফলে ৭৫ জন নেগেটিভ এসেছে। আক্রান্ত এক যুবক ও এক বৃদ্ধকে উদ্ধার করে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। এদের মধ্যে একজন ঢাকার গার্মেন্টস কর্মী ও অন্যজন নারায়ণগঞ্জে তাবলিগে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হন। এখনও পর্যন্ত ১১০ নমুনার পরীক্ষার ফলাফল আসেনি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাঞ্চানগর এলাকার একটি বাসায় নারায়ণগঞ্জ থেকে এক ব্যক্তি এসেছেন। পরে প্রশাসন ওই ভবনটি লকডাউন করে দেয়। তবে সদর উপজেলার দালাল বাজারের হাজি লনী রাজা চৌধুরীর বাড়িতে নারায়ণগঞ্জ থেকে সাতজন লোক এসেছেন। তারা এলাকায় অবাধে ঘোরাফেরা করছেন। প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জেলার রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগতি ও দালাল বাজার এলাকায় নারায়ণগঞ্জ থেকে বেশি লোক এসেছেন। তারা স্থানীয় পর্যায়ে পরিচয় গোপন করে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই রোগী সেজে বিভিন্ন কৌশলে লক্ষ্মীপুরে এসেছেন।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবদুল গাফ্ফার বলেন, এখন পর্যন্ত জেলায় দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা প্রায় ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। অনেকেই এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন। কিন্তু নারায়ণঞ্জ থেকে সড়কপথে যোগাযোগের মাধ্যম পাশের তিন জেলা লকডাউন। তারপরও কিভাবে এই জেলায় এত মানুষ প্রবেশ করেছেন তা চিন্তার বিষয়। তাদের কারণে লক্ষ্মীপুর জেলা ঝুঁকিতে রয়েছে। জেলায় বাইরের মানুষ প্রবেশের ব্যাপারে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আরও কঠোর হওয়া উচিত ছিল। পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে।

কাজল কায়েস/এএম/এমআরএম