ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গাইবান্ধায় করলার কেজি এক টাকা, টমেটোর দুই টাকা

জেলা প্রতিনিধি | গাইবান্ধা | প্রকাশিত: ০৬:৫৬ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২০

উত্তরের জেলা গাইবান্ধার কৃষকরা ২০১৯ সালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি পূরণ করতে এবার হাড়ভাঙ্গা শ্রম দিয়ে জমিতে উৎপাদন করেন মরিচ, পেঁয়াজ রসুন, করলা, টমেটো, পটল ও মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল। ফলন ভালো হওয়ায় তারা মনে করেছিলেন বন্যার ক্ষতির ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে তাদের। কিন্তু করোনাভাইরাস তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।

কয়েক বছর ধরে এ জেলায় সবজি চাষ করে যারা কোটিপতি হয়েছেন, পেয়েছেন কৃষি পুরস্কারওসহ বিভিন্ন সনদ এবারের হাহাকারে তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে হতাশার। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

করোনাভাইরাসের কারণে বেশ কিছুদিন হলো লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে গাইবান্ধা জেলাকে। এতে বিপাকে পড়েছেন সবজি চাষিরা। তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রির কোনো উদ্যোগ না থাকায় এবারও তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছেন। লকডাউনের কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার না আসায় বাজারে তাদের কৃষিপণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দামে।

সচেতন মহলের দাবি, নির্দিষ্ট কৃষিপণ্য বিক্রিসহ সরকারিভাবে বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেয়া জরুরি। তবে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় সহযোগিতার কথা জানান।

তেমনি এক হতাশ কৃষক গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের কৃষক আমির হোসেন। মাত্র ৫ শতাংশ জমি থেকে আজ তিনি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। একটি জমিতে চারটি ফসল ফলিয়ে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক। গাইবান্ধায় আদর্শ চাষি হিসেবে তার বেশ সুনাম। কিন্তু গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় তার অর্জিত সুনামসহ সব কিছু তলিয়ে গেছে পানিতে।

কান্নাজড়িতকণ্ঠে আমির হোসেন জানান, ভয়াবহ বন্যায় তার সবজি ক্ষেতের ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেক কষ্ট করে সেই ক্ষতির রেশ কাটতে না কাটতে এ বছরও পড়েছেন নতুন বিপদে।

তিনি জানান, এ বছর সবজির ব্যাপক আবাদ হয়েছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে পানির দামে। দুই টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে টমেটো। করলার কেজি এক টাকা। ১০০ টাকার মিষ্টি কুমড়া ১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় গলায় দড়ি দিয়ে মরণ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

সাঘাটা উপজেলার হলদিয়ার চরের কৃষক আবেদ আলী জানান, করোনাভাইরাসের কারণে তার অনেক লোকসান হয়েছে। প্রতিদিন সকালে লালশাক ও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে সংসার চালাতেন তিনি। এখন এসব পণ্য তাকে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

jagonews24

বোনারপাড়া ইউনিয়নের কৃষক আবুল চাষি জানান, লকডাউনের মাঝেও সবজি বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান নির্ধারণ দিলে হয়তো বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আসতো কিনতে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা করেনি প্রশাসন।

সাঘাটা পদুমশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তৌহিদুজ্জামান স্বপন জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন বাজার থেকে কৃষিপণ্য ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রেরণ করলেই এ জেলার কৃষকদের ন্যায্য দামের সংকট মিটবে।

কৃষি গবেষক ও মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাসে গাইবান্ধা জেলা লকডাউন করা হয়েছে। তাই হুমকিতে কৃষকরা। সরকার পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনী দিয়ে নির্দিষ্ট স্থান থেকে কৃষকের উৎপাদিত কৃষি পণ্যগুলো পাইকারি কিনে ঢাকাসহ বড় বড় জেলায় পাঠালে গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা কৃষিপণ্যের ন্যায্যমমূল্য পাবে।

এই বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা আছে।

জাহিদ খন্দকার/এমএএস/এমকেএইচ