রংপুরে এবার সান্ধ্য আইন জারি
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রংপুর নগরীতে সান্ধ্য আইন জারি করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। এই আইনে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ওষুধের দোকান ছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।
এছাড়াও মেট্রোপলিটন এলাকায় জরুরি সেবা, চিকিৎসা, ভোগ্য ও রফতানি পণ্য পরিবহন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ও যানবাহন ছাড়া সব ধরনের ব্যক্তি ও যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।
এ নিয়ে নগরজুড়ে মাইকিং শুরু করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বুধবার (৮ এপ্রিল) সকালে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল আলিম মাহমুদ জানান, মানুষকে ঘরবন্দি করতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নানা ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের উপস্থিতি পেলে সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। আর চোখের আড়াল হলেই বেড়ে যায় মানুষের চলাচল।
তিনি বলেন, রংপুর নগরীর সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঘরে থাকতে বিশেষভাবে অনুরোধ করে মাইকিং করা হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটায় নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে ভ্রাম্যমাণ দোকান স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মেট্রোপলিটন পুলিশের হটলাইনে ফোন করলে চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য পৌঁছে যাবে ক্রেতার বাড়িতে। ওষুধ থেকে শুরু করে সব ধরনের ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করবে এই ভ্রাম্যমাণ দোকান। এরপরও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই এই সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে। কেউ এ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলেই নগরীতে প্রবেশের সব পথ বন্ধ করা হবে।
এদিকে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে রংপুর নগরীসহ জেলার ৮ উপজেলায় পৃথকভাবে কাজ করছে পুলিশ, সেনাবাহিনী, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটি ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, স্বল্পমূল্যে চাল, আটা ও টিসিবির পণ্য বিক্রিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে। জনসমাগম রোধে ইতোমধ্যে বিকেল ৫টার পর জেলার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। জেলার ৮ উপজেলা, ৩ পৌরসভা ও একটি সিটি কর্পোরেশনের জন্য ৬০০ মেট্রিক টন চাল ও ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়। এছাড়াও ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০ লাখ টাকা মূল্যের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় কিছুটা হলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু উপজেলা শহর ও গ্রামের মানুষদের মাঝে করোনা ভীতি নেই। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে উপজেলার প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রয়োজন ছাড়া অহেতুক সড়কে চলাচল কারীদেরকে ঘরমুখো করছে পুলিশ। তিনি নিজেও দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষদের নানাভাবে খাদ্য সহযোগিতা করছেন।
এদিকে রংপুর নগরীর কটকিপাড়া, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, জুম্মাপাড়া, বাবুপাড়াসহ বেশ কিছু পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে বাঁশ দিয়ে বেড়িকেড তৈরি করে সড়কের প্রবেশ পথগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন।
জিতু কবীর/আরএআর/জেআইএম