ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

লাইনম্যান বটে!

প্রকাশিত: ১০:৫৬ এএম, ১৩ অক্টোবর ২০১৫

অবৈধ গ্যাস সংযোগের পর নরসিংদীর পলাশে এবার ছড়িয়ে পড়ছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবৈধ হাজারো বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন লাইনম্যান তরিকুল। তাকে বহুবার বদলি করা হলেও তিনি তদবির করে বদলি স্থগিত করেছেন।

অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ চক্রের প্রধান অভিযুক্ত তরিকুল নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ঘোড়াশাল জোনাল অফিসের লাইনম্যান গ্রেড-১। এই অভিযোগে গত মাসে তাকে পিরোজপুরে বদলি করা হলেও তিনি শ্রম আদালতে মামলা করে তা স্থগিত করেছেন।

সরেজমিনে উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ছোট রামপুর, জিনারদী ইউনিয়নের গুভুরিয়া, পৌরসভার দড়িহাওলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বাড়িতে মিটার নেই তবুও জ্বলছে বিদ্যুতের আলো। চলছে ইলেক্ট্রনিক পাখা, ফ্রিজ, টেলিভিসনসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ। আবার কোথাও মিটার থাকলেও তার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এছাড়া আবাসিক সংযোগ দিয়েও ব্যবহার হচ্ছে বানিজ্যিকভাবে। যার কোনো বিল হচ্ছে না।

ছোট রামপুরের রাজমিস্ত্রী শাহিন মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি থেকে বাড়িতে সংযোগ দেয়া হয়েছে কিন্তু বোর্ডে মিটার নেই। মিটার ছাড়াই বাড়িতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎ। সেই বাড়ি থেকে ছোট রামপুরার উত্তরপাড়ার একাধিক বাড়িতে সংযোগ দেয়া হয়েছে। মাঠে বাঁশের খুঁটি পুঁতে ওই সকল সংযোগের তার টানা হয়েছে।

জানতে চাইলে শাহিন মিয়া বলেন, এক বছর আগে ফরহাদকে কারেন্টের জন্য ১৬ হাজার টাকা দিছি। ৮/৯ মাস আগে সে মিটার ছাড়াই এই লাইন লাগাইয়া দিছে। মিটার নাই তাই বিলও হয় না। তাই আমার বাড়ি থেকে ফরহাদ আরও কয়েক বাড়িতে লাইন দিলেও আপত্তি করি নাই।

ছোট রামপুরের উত্তর পাড়ার নজর আলী ও আল-আমিনের বাড়িতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। জানতে চাইলে আল-আমিন বলেন, কারেন্টের লাইগ্যা ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা করতে পারে না। দীর্ঘদিন ঘুরেও লাইন পাইনি। অবশেষে ফরহাদকে ১৬ হাজার টাকা দেয়ার পর এই লাইন টেনে দিয়েছে।

গ্রামের প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান জাগো নিউজকে বলেন, লাইনম্যান তরিকুলের ছত্রছায়ায় ফরহাদ গ্রামের শতশত মানুষের কাছ থেকে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু সে গ্রামের নিরীহ ও অশিক্ষিত মানুষকে ২-৩ বছর ঘুরিয়ে অবৈধ সংযোগ দিচ্ছে। এর কারণে আমাদের গ্রামে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। শুনতাম, বিদ্যুতের আইন নাকি ভয়ানক। কিন্তু যারা বিদ্যুতের এই হরিলুট করছে তাদের কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না?

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ফরহাদের ব্যবহৃত মোবাইলে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। জিনারদী ইউনিয়নের গুভুরিয়া পাড়ার দিলীপ রায় ৩ মাস আগে বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেও বিল পাননি। জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বৈধ না অবৈধ জানি না। লাইনম্যান তরিকুলকে অনেক টাকা দিয়ে সংযোগ পেয়েছি। বিদ্যুৎ জ্বলছে প্রায় তিন মাস যাবৎ কোনো বিল আসে না।

পলাশ দড়িহাওলা পাড়া গ্রামের অনিল কুমার দে ও আশীষ কুমার দত্ত লাইনম্যান তরিকুলকে এক বছর আগে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিলেও দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি। অবশেষে গত তিন সপ্তাহ আগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেও তা ছিল অবৈধ। খবর পেয়ে গত এক সপ্তাহ সেই অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় তরিকুলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ, মিটার, খুঁটি সংযোগ দেয়ার বিশাল বাহিনী। এর মধ্যে তালতলীর মোশারফ, রামপুরার ফরহাদ, কুড়াইতলী ও রাবানের চন্দন, শংকর, রতনসহ একাধিক লোক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ অফিসের এক কর্মচারী জাগো নিউজকে জানান, বিগত আট বছরে তরিকুল অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত লাইনম্যান তরিকুল জাগো নিউজকে বলেন, এমনিই চাকরি নিয়ে ঝামেলায় আছি, এগুলো প্রকাশ করলে কি লাভ হবে? এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তাহলে ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ঘোড়াশাল জোনাল অফিসের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিজিএম) অনিতা বর্ধণ জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলার রামপুর, কিতাম্বরদী, শেকান্দরদী গ্রামে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের প্রবণতা বেশি।

ইতোমধ্যে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার অভিযোগে আমরা রামপুর গ্রামের ফরহাদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। পাশাপাশি ওই সকল এলাকায় বেশ কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে। কিন্তু সামাজিক সচেতনতার অভাবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নির্মুল করা সম্ভব হচ্ছে না।

ডিজিএম বলেন, তরিকুল পলাশের অনেক স্থানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছিল। যার কারণে তাকে ঘোড়াশাল অফিস থেকে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি বদলি স্থানের কাজে যোগ না দিয়ে শ্রম আদালতে মামলা করে বদলির আদেশ স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে উপর মহলে এখানে থাকার জন্য জোড় তদবির চালাচ্ছেন। এ পর্যন্ত যতবার তাকে বদলি করা হয়েছে উপর মহলের তদবিরে পুনরায় পলাশেই রয়ে গেছেন তিনি।

সঞ্জিত সাহা/এমজেড/পিআর