চাকরি বাঁচাতে পায়ে হেঁটে ঢাকার পথে পোশাককর্মীরা
দেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে বাধ্য করতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। সারাদেশে কার্যত স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি সবাই। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন।
এ অবস্থায় চাকরি বাঁচাতে পায়ে হেঁটে ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন হাজারো পোশাক শ্রমিক। শনিবার (০৪ এপ্রিল) থেকে গার্মেন্টস খুলে দেয়ায় এ অবস্থায় কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
গতকাল শুক্রবার (০৩ এপ্রিল) বিকেল থেকে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কর্মস্থলে ফেরা শ্রমিকের স্রোত দেখা যায়। করোনাভাইরাস দুর্যোগ উপেক্ষা করে হাজারো পোশাক শ্রমিক শনিবারও ফিরেছেন কর্মস্থলে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভ্যানে, ট্রাকে, কাভার্ডভ্যান যে যেভাবে পারছেন কর্মস্থলে ফিরেছেন।
শ্রমিকরা জানিয়েছেন, শনিবার থেকে গার্মেন্টস খোলা। আজকের মধ্যে গার্মেন্টেসে পৌঁছাতে না পারলে চাকরি থাকবে না তাদের। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে ফিরছেন তারা।
কয়েকজন শ্রমিক জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কারখানাগুলো ৩ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ৪ এপ্রিল থেকে কারখানাগুলো খোলা হয়। যদি সঠিক সময়ে কর্মস্থলে না পৌঁছেন তাহলে চাকরিচ্যুতির ঘোষণা দিয়েছে মালিকপক্ষ। এজন্য পায়ে হেঁটে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছেন তারা।
তারা বলেন, হয়তো কিছুদিনের মধ্যে করোনা আতঙ্ক কেটে যাবে। কিন্তু আমরা চাকরি হারিয়ে ফেললে পরে কিভাবে বাঁচব। সামনে ঈদ, এখন কারখানা কর্তৃপক্ষের কথামতো কাজে যোগদান না করলে যদি চাকরি হারিয়ে ফেলি তাহলে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হবে আমাদের।
স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে শনিবার ভোর ৬টায় গাজীপুর চৌরাস্তা যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছেন আফজাল হোসেন। তিনি ওই এলাকার একটি কারখানার শ্রমিক। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কারখানা বন্ধ ঘোষণা হওয়ায় পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যান তিনি। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ট্রাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গিয়েছিলেন। ৪ এপ্রিল কারখানা খোলা থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে এবার পিকআপে কর্মস্থলে রওনা হয়েছেন।
এবারের যাত্রায়ও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের। পিকআপটি মহাসড়কে আটকে তাদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গণপরিবহনসহ সবকিছু বন্ধ। অথচ আমাদের কারখানা খোলা। একদিকে করোনার ভয়, অন্যদিকে চাকরি হারানোর ভয়। আসলে আমরা কী করব? কোথায় যাব?।
শনিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনা বাজার থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত দেখা গেছে জনস্রোত। ৪ এপ্রিল কারখানা খোলা থাকায় আতঙ্কের মাঝে ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফিরেছেন সাধারণ মানুষ।
মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল হক বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কারখানা বন্ধ ঘোষণায় অনেকেই বাড়ি গেছেন। এখন কারখানা খোলার ঘোষণায় তারা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ পিকআপ ও ট্রাকে করে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। আমরা হাইওয়ে পুলিশ শ্রমিকদের করোনা আতঙ্ক বুঝিয়ে ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করছি। পাশাপাশি মালবাহী যানবাহনে মানুষ বহন করলে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এদিকে, সাধারণ মানুষের জনস্রোত ফেরাতে সকাল থেকে সেনাবাহিনীসহ উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মহাসড়কে কাজ করছে। কিন্তু কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না শ্রমিকদের স্রোত।
শ্রীপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা নাসরিন বলেন, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী পরিবহন করায় সড়ক পরিবহন আইনে বিভিন্ন পিকআপ ও ট্রাককে ১৯ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মহাসড়কে অভিযান চালাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এএম/এমকেএইচ