মাগুরায় প্রাইভেট ক্লিনিকের সংখ্যা বাড়ছে
মাগুরায় প্রাইভেট ক্লিনিক, প্যাথলোজি সেন্টার ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অধিকাংশ ক্লিনিকেরই নেই বৈধ কাগজপত্র। সরকারি নিময় নীতির তোয়াক্কা না করেই ভাড়া করা বিল্ডিংয়ে এ সকল ক্লিনিকের জন্ম হচ্ছে চক্রবৃদ্ধি হারে।
সরকারি হিসাব মতে, মাগুরায় ৩৩টি ক্লিনিকের অনুমতি রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৮টি, শ্রীপুরে ২টি, মহম্মদপুরে ২টি ও শালিখায় ১টি। এছাড়া প্যাথলোজি রয়েছে মোট ৩৭টি। এদের মধ্যে সদরে ৩১টি, মহম্মদপুরে ৪টি ও শালিখায় ৪টি। শ্রীপুরে কোনো বৈধ প্যাথলোজি সেন্টার নেই।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, এ সকল রেজিস্ট্রেশনবিহীন ক্লিনিকের পরিমাণ শতাধিক ছাড়িয়েছে। এ সকল অবৈধ ক্লিনিকের ভিড়ে সাধারণ মানুষের বুঝে উঠা কঠিন কোনটায় গুনগতমান সম্পন্ন চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
মাগুরা সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী মো. কাওছার আলী জাগো নিউজকে জানান, অধিকাংশ ক্লিনিকের পরিবেশ অধিদফতরের সার্টিফিকেট, ট্রেড লাইসেন্স, ইনকাম ট্যাক্স, ডাক্তার, নার্সসহ যথেষ্ট পরিমাণ জনবলের অভাব রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি রোগীর জন্য ৮০ স্কয়ার ফিট জায়গা বরাদ্ধের নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ক্লিনিক মালিকরা তা মানছেন না।
মঘী ইউনিয়ন থেকে আসা রহমান শেখ নামের এক ভুক্তভোগী জাগো নিউজকে বলেন, এ সকল ক্লিনিকে নেই অস্ত্রপচারের কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি, এক্স-রে মেশিনসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধ পত্রেরও মজুদ নেই বললেই চলে। অধিকাংশ ক্লিনিক মালিকেরা সদর হাসপাতালের ডাক্তারদের ভাড়া করে নিয়ে আসেন। ফলে সদর হাসপাতালে ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম অসুবিধায় পড়েন।
সার্জারি বিভাগ, গাইনি বিভাগ, অর্থোপেডিক, বার্ন ইউনিটসহ নেই কোন উন্নত অপারেশন থিয়েটার (ওটি) কক্ষ। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক কেয়ারটেকার জানান, কর্তৃপক্ষ কোনো ক্লিনিককে রক্ত সংরক্ষণের অনুমতি না দেয়া শর্তেও বেশিরভাগ ক্লিনিকের মজুদ রক্ত ক্রয় করা হয় পেশাদার মাদকাসক্তদের কাছ থেকে। অল্প পয়সায় এসব রক্ত পাওয়া যায় চাহিদা মতো সময়ে। এজন্য তারা এ সকল মাদকাসক্তদের নিকট থেকেই রক্ত কিনে নরমাল ফ্রিজে রাখে। ফলে রক্তের গুণগত মানও নষ্ট হয় যায়।
এত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও এ সকল ক্লিনিক মালিকেরা দিনের আলোয় চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের ব্যবসা। খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ মালিকের একাধিক দালাল চক্র রয়েছে। যারা সদর হাসপাতাল গেট এমনকি হাসপাতালে ভর্তি চিকিৎসাধীন রোগীকেও ফুসলিয়ে-ফাঁসলিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তির জন্য প্ররোচিত করে থাকেন।
দালাল চক্রের এক সদস্য কোরবান জানান, তারা রোগীদের ক্লিনিকে পাঠাতে পারলে একটা কমিশন পান। রোগীর অবস্থা বুঝে এ কমিশন নির্ধারিত হয়। তবে সাধারণত রোগী প্রতি তারা ৩০০টাকা করে পেয়ে থাকেন।
মাগুরা সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. এফবিএম আব্দুল লতিফ জাগো নিউজকে বলেন, কিছু ক্লিনিক রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেই তাদের কার্যক্রম চালু করে দিয়েছে। আবার কিছু ক্লিনিক প্রতি বছর তাদের লাইসেন্স নাবায়ন করছেন না। তবে যে সকল ক্লিনিক এসব নিয়ম নীতি মানছে না তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
আরাফাত হোসেন/এসএস/এমএস