হাসপাতালে রোগী কম, সেবা চলছে হটলাইনে
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনায় বাড়িতে অবস্থান করছেন লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। চিকিৎসা সেবা নিতেও তারা হাসপাতালে যাচ্ছেন না। এতে ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালের প্রায় ৪০ জনের মত রোগী ভর্তি আছেন। সেখানে আগে রোগীদের মেঝেতে রেখে সেবা দিতে হতো। এখন অধিকাংশ বেড খালি পড়ে আছে। বহির্বিভাগও পুরো ফাঁকা। আগে যেখানে প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতেন। তবে সেবা চলছে স্বাস্থ্য বিভাগের হটলাইনে।
সরেজমিনে হাসপাতাল এলাকায় দেখা যায়, হাসপাতালের বাইরে রিকশার ভিড় নেই। রোগীর স্বজনদেরও আনাগোনা দেখা নেই। বলতে গেলে পুরো ভূতুড়ে এলাকা। হাসপাতালের ভেতরটাও প্রায় একই রকম। বহির্বিভাগে কাউকে সেবা নিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়নি। অধিকাংশ বেডগুলো রোগীশূন্য। বিছানাগুলো ভাজ করে রাখা আছে। জরুরি বিভাগেও আগের মতো তাড়াহুড়া করে কাউকে চিকিৎসা দিতে দেখা যায়নি।
রোগীর নামের রেজিস্ট্রি খাতাও বেশি উল্টানোর প্রয়োজন হচ্ছে না। তবে জরুরি বিভাগে থাকা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালনে হাসপাতালেই অবস্থান করছেন। গাইনি, শিশু, পুরুষ ও মেডিসিন ওয়ার্ডসহ সবগুলোতে একই অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে রোগীরা হাসপাতাল না এলেও হটলাইনে সেবা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে সদর হাসপাতালে ছয়টি ও চার উপজেলায় চারটি হটলাইন ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে। সদর হাসপাতালের হটলাইন নম্বরগুলো হচ্ছে- ০১৭৩০৩২৪৭৭৩, ০১৭১২৭৩৯৩৭৮, ০১৭১১৩৩৯৮৫৭, ০১৮২৩৭০৪৫২১, ০১৮২২১২০৬৬৭, ০১৮১৮২৫৬৪৭১।
এদিকে করোনার কারণে লক্ষ্মীপুরে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। গত ২৭ মার্চ গাইনি চিকিৎসক না থাকায় এক প্রসূতি মায়ের সিজারের জন্য হটলাইন নম্বরে কল পেয়ে জেলা সিভিল সার্জন আবদুল গাফ্ফার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ছুটে যান। পরে তিনি নিজ হাতে ওই প্রসূতির সিজার করেন। ওই মায়ের ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মা ও নবজাতক শিশুটি সুস্থ রয়েছে। এমন মহতি কাজে জেলাবাসীর কাছে সিভিল সার্জন ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন। নবজাতক শিশুসহ তার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
জানতে চাইলে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনা আতঙ্কে মানুষের বাইরে চলাচল কম। খুব বেশি অসুস্থ না হলে কেউ হাসপাতালে আসেন না। যারা একেবারেই বেশি অসুস্থ শুধু তারাই আসেন। আর সামান্য অসুখের জন্য আমরা ২৪ ঘণ্টা হটলাইনে সেবা দিয়ে আসছি। তবে আমরা হাসপাতালে যেকোনো সেবা দিতে প্রস্তুত আছি। সেবা নিতে সবাইকে হটলাইনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবদুল গাফ্ফার বলেন, বেশি জরুরি না হলে কেউ ঘর থেকে বের না হওয়াই ভালো। বাড়িতেই সেবা নেয়া যায় এমন অসুখের জন্য হাসপাতালে এসে ভিড় করা ঠিক হবে না। সবার জন্য জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে হটলাইন নম্বর চালু আছে। সেখানে যোগাযোগ করে সেবা গ্রহণের অনুরোধ করেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হটলাইন নম্বরগুলো হচ্ছে- কমলনগর-০১৭৩০৩২৪৮৫৬, রায়পুর-০১৭৩০৩২৪৮৫৭, রামগঞ্জ-০১৭৩০৩২৪৮৫৯ ও রামগতি-০১৭৩০৩২৪৮৫৮। সাধারণ রোগের চিকিৎসা পেতে এসব হটলাইন নম্বরে কল করলে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে।
কাজল কায়েস/আরএআর/এমএস