গেঞ্জি ও ব্যাগ তৈরির কাপড় দিয়ে মাস্ক, বিশেষজ্ঞরা বলছেন মহাবিপদ
পাঁচ থেকে শুরু করে ৫০ টাকা মূল্যের নিম্নমানের মাস্ক দিয়ে ভরে গেছে বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকা। ভ্রাম্যমাণ দোকানে ফেরি করে বিক্রি করা এসব মাস্ক নিরাপত্তাবন্ধনী হিসেবে ব্যবহার করছে সবাই।
কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, করোনার মতো শক্তিশালি ভাইরাস দমনে এসব মাস্ক কোনো কাজে আসবে না। এগুলো মুখে দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ ব্যক্তির কাছাকাছি গেলেই ঝুঁকি বাড়বে আরও বেশি, এটি মহাবিপদ। শুধুমাত্র এন-৯৫ মাস্ক পারে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে।
করোনা আতঙ্কে বিশ্বব্যাপী মাস্ক ব্যবহার বেড়ে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশে মাস্কের দাম বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে বাজারে সার্জিক্যাল মাস্ক ও এন-৯৫ মাস্ক টাকা হলেও মিলছে না। এ কারণে বিকল্প উপায়ে সুরক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। আবার অনেকে মাস্কের সঠিক ব্যবহার ও গুরুত্বের বিষয়টি না বোঝার কারণে ফুটপাতের নিম্নমানের মাস্কগুলো কিনে মুখে দিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব মেডিসিনের মেডিসিন ও এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ এলি পেরেনসভিচ তার একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, আপনি যদি অসুস্থ হন এবং ওই অবস্থায় ঘরের বাইরে যেতে হয়; তবে মাস্ক পরবেন। আপনার কোনো ধরনের ফ্লু থাকলে ও সেটা কভিড সন্দেহ হলে সুস্থ মানুষের সুরক্ষার জন্য এবং বাড়িতে নিজেকে অসুস্থ মনে হলে সদস্যদের রক্ষার জন্য আপনার মাস্ক পরা উচিত। তবে এটি অবশ্যই আসল জীবাণু প্রতিরোধক মাস্ক হতে হবে।
এই প্রবন্ধে তিনি আরও লিখেছেন, মানুষজন ভুলভাবে মাস্ক পরে এবং এতে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। কারণ মাস্ক পরার কারণে প্রায়ই তারা নিজের মুখ স্পর্শ করে।
বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গেঞ্জির ঝুট কাপড়, ব্যাগ তৈরির জন্য ফেব্রিক টিস্যু ও নরমাল কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাস্ক। সর্বনিম্ন পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত প্রতিটি মাস্ক বিক্রি করা হয়। একটু ডিজাইন করা ভিন্ন রকমের মাস্কগুলো বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। মৌসুমি একশ্রেণির ব্যবসায়ী রাতারাতি চালু করেছে এই মাস্ক বানানোর কাজ। তড়িঘড়ি করে তৈরি করা এসব মাস্ক কোনো রকমের নিরাপত্তাবন্ধনী দিয়ে তৈরি করার চেষ্টা করা হয়নি।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. রেজাউল আলম জুয়েল বলেন, একটি মাস্কে তিন স্তরের প্রটেকশন থাকতে হবে। অর্থাৎ তিনটি ভাঁজ থাকতে হবে। তাহলে সেটি ছোটখাট জীবাণু মানুষের নাক-মুখ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা রোধ করতে পারবে। তবে তারপরও এটি করোনার জন্য যথেষ্ট নয়। এই ভাইরাসের জন্য অবশ্যই এন-৯৫ মাস্ক পরতে হবে।
বগুড়া শহর ঘুরে দেখা গেছে, যারা মাস্ক পরে ঘোরাফেরা করছেন তাদের প্রায় সবাই নিম্নমানের এসব মাস্ক নিয়েছেন। এমনকি ছোট শিশুদেরকেও এই নিম্নমানের মাস্ক পরানো হয়েছে।
জানতে চাইলে শহরের খান্দার এলাকার ব্যবসায়ী মীর কাশেম বললেন, অতো কিছু বুঝি না। হাতের কাছে যেটা পাচ্ছি সেটাই পরেছি। কাজ হবে কি-না বলতে পারব না।
শহরের সাতমাথা এলাকার বাসিন্দা ফরিদা পারভীন বলেন, আমাদের কেউ জানায়নি কোন ধরনের মাস্ক পরতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো বাজারে যেটা পাওয়া যাচ্ছে, আমরা তো সেটাই পরব।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এরপর পথেঘাটে, অফিসে অনেকেই মাস্ক পরছেন। আবার মাস্ক ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে মতও দিচ্ছেন অনেকে। ঘুরেফিরে উঠে আসছে একটি প্রশ্নই, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কতটা প্রতিরোধ করবে এসব ফেস মাস্ক?
তার মতে, শুধু ফেস মাস্ক পরলেই নিজেকে নিরাপদ ভাবার সুযোগ নেই। পাতলা সার্জিক্যাল মাস্ক সাধারণ দূষণ, ধুলাবালু আটকাতে বেশি ব্যবহৃত হলেও তা পুরোপুরি নিরাপত্তা দেয় না। তবে ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তির মাস্ক পরা জরুরি। এর বাইরে মাস্কের দুটো উপকার আছে: মাস্ক পরা থাকলে নাকে-মুখে হাতের স্পর্শ পড়ে কম, আর একেবারে মুখের সামনে কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে মাস্ক কিছুটা নিরাপত্তা দেয়। তবে সাধারণ মাস্কের ফাঁকফোকর গলে ভাইরাস বা বাতাসবাহিত ড্রপলেট সহজেই প্রবেশ করতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাস্ক মুখে ঠিকমতো ফিটও হয় না।
এএম/এমএস