দেশের সর্ববৃহৎ দূর্গোৎসব বাগেরহাটের শিকদার বাড়িতে
বাগেরহাটের হাকিমপুরে শিকদার বাড়িতে এবারও দেশের সর্বাধিক প্রতিমার সমন্বয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন এগিয়ে চলছে। এ বছর এ মন্দিরের প্রতিমার সংখ্যা ৪৩১টি। সর্বাধিক প্রতিমা, প্রতিমার বৈচিত্রতা, ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার, সর্বাধিক ব্যয় এবং ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দূর্গামন্দির হিসেবে এটি বিবেচিত হচ্ছে।
এলাকার বিশিষ্ট শিল্পপতি লিটন শিকদারের ব্যক্তিগত পৃষ্ঠপোষকতায় নিজস্ব পরিমণ্ডলে প্রতিবছরের মতো এ বছরও এ দূর্গােৎসব এলাকায় চমক সৃষ্টি করছে।
আগামী ১৯ অক্টোবর বিকেল তিনটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও নৌ পরিবহন মন্ত্রী মো.শাহজাহান খান বাগেরহাটের হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়ির এই দূর্গাপূজার উদ্বোধন করবেন বলে জানান লিটন শিকদার। এজন্য চলছে সব ধরনের প্রস্তুতি। এ বছর এ মন্দিরে দূর্গাপূজা উপলক্ষে কয়েক লাখ মানুষের আগমন ঘটবে।
আগামী ১৯ অক্টোবর সোমবার ষষ্ঠী পূজা অর্থাৎ বেলগাছের নিচে বোধনের মধ্য দিয়ে দেবী দূর্গার স্বর্গ থেকে মত্তলোকে আর্বিভাব ঘটবে। মঙ্গলবার নবপত্রিকা অর্থাৎ কলাবউকে মণ্ডপে প্রবেশের মধ্য দিয়ে মহাসপ্তমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার মহা অষ্টমী, বৃহস্পতিবার মহানবমী পূজার মধ্য দিয়ে দেবীকে আরাধনা। একইদিন দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্যে চারদিনব্যাপী দূর্গা উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এ বছর দেবী দূর্গা ঘোড়ায় চড়ে আসছেন এবং নৌকায় গমন করবেন।
বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অমিত রায় জাগো নিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীদিন পড়ায় এদিন দেবী দূর্গা বিসর্জন না করে পরদিন শুক্রবার দেবী দূর্গাকে বিসর্জন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা পূজা উদযাপন কমিটি। তিনি বলেন, বাগেরহাট জেলার মধ্যে এ বছরও সর্বাধিক প্রতিমা নিয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলার শিকদার বাড়িতে দূর্গােউৎসব হচ্ছে।
এছাড়া বাগেরহাট সদর, কচুয়া, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মংলা, রামপাল, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও চিতলমারী উপজেলায় সব মিলে ৫৮৭টি পূজা মণ্ডপে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব দূর্গা পূজা আয়োজনের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মণ্ডপগুলোকে বিভিন্ন সাজে সাজানো হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েও তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
শিকদার বাড়ির দূর্গাপূজা বড় আয়োজন। তাই দ্রুত গতিতে চলছে প্রতিমা নির্মাণের কাজ। প্রতিটি প্রতিমার জন্য আলাদা আলাদা কক্ষ তৈরি করা হয়েছে এখানে। দর্শকদের আকৃষ্ট করতে পুকুরের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে ৩৫টি প্রতিমা। এখানে সর্বমোট ৪৩১টি প্রতিমার মধ্যে শিব পুরানের সতীর দেহত্যাগ, দোক্ষ যজ্ঞ, হনুমান, দশানন রাবন, নারদ, প্রহলদ প্রতিমা দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করতে চলছে কারুকার্য।
এর পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন শিক্ষণীয় দৃশ্য রাখা হয়েছে এ দূর্গা মণ্ডপে। এখন চলছে শেষ পর্যায়ের কাজের পরিচর্যা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেশিনের মাধ্যমে রঙ করা হচ্ছে প্রতিমাগুলোতে। মন্দির প্রাঙ্গণ ৩/৪টি সারির দুই পাশে বক্সের মধ্যে স্বতন্ত্রভাবে এক একটি প্রতিমার অবস্থান। প্রতিটি প্রতিমার নড়া চড়া হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে।
শিকদার বাড়ির এতগুলো প্রতিমায় নিখুঁত তুলির আঁচড়ে মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে রাজবাড়ির কার্তিক চন্দ্র শর্মা নিজেই ভাষ্কর্যের কাজ করে চলেছেন আপন গতিতে। অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে ইতোমধ্যে অনেক প্রতিমার রঙ করা শেষ হয়েছে। রামায়ন-মহাভারতের অনেক দৃশ্য প্রতিমার মাধ্যমে প্রসিদ্ধ এ ভাষ্কর তার তুলি দিয়ে জীবন্ত করে তুলেছেন।
এ মন্দিরের আয়োজন সম্পর্কে ডাক্তার দুলাল কৃষ্ণ শিকদার জাগো নিউজকে জানান, সাধ্যমতো আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এলাকার লোক এভাবে ধর্মীয় সংস্কৃতি উপভোগ করার সুযোগ কম পান। আমরা সে অভাব পূরণের চেষ্টা করছি। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা সবাই ছুটে আসবেন শিকদার বাড়ির পূজা মণ্ডপে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে নারী-পুরুষসহ সকল মানুষের দেখা মিলবে এ মণ্ডপে এমনটাই তিনি আশা করছেন।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে জানান, সার্বজনীন দূর্গাৎসব শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এমজেড/আরআইপি