গাইবান্ধায় বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৫০০ টাকা
‘কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ’ এমন ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধায়। সরকার যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ব্যস্ত, ঠিক তখনই গাইবান্ধায় হঠাৎ বেড়েছে চালের দাম। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় চালের (৫০ কেজির) বস্তায় দাম বেড়েছে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। রাত ৮টার পর আর টাকা দিয়েও মিলছে না চালের বস্তা। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তবে প্রশাসন জানাল, ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা।
সরেজমিনে সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া বাজারে দেখা যায়, বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। সাধারণ মানুষ চাল কিনতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। সাধারণ ক্রেতারা এমন অভিযোগ করলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, পাইকাররা চালের দাম বেশি নিচ্ছেন বলে তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
বোনারপাড়া বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, সকালে (৫০ কেজি) চালের বস্তার দাম ছিল ১৬৩০ টাকা, সন্ধ্যায় সেই চাল ২০০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। টাকা দিয়েও মিলছে বিআর-২৮ ও গাঞ্জিয়া ধানের চাল। করোনা নিয়ে দেশের মানুষ ভয়ে আছে বলেই চাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চালের বাজারে এসে মাথা ঘুরে যাচ্ছে। হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধিতে আমাদের পরিবার সমস্যায় পড়বে। কারণ আমাদের তো সবসময় কিনে খেতে হয়। করোনাভাইরাসে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা উল্টো চাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করেছে। এভাবে যদি চালের দাম বাড়তে থাকে তাহলে মানুষকে অনাহারে দিন কাটাতে হবে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সোনাইডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল কাদের বলেন, চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক বিপাকে পড়তে হচ্ছে। সারাদিন দিনমজুর হিসেবে যা টাকা ইনকাম হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো অনেক কষ্টকর। তারপর যদি এভাবে চালের দাম বাড়তে থাকে, তাহলে আগামীতে জীবনধারণ করা অনেক কষ্টকর হবে। সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে আমাদের মতো দিনমজুরদের ভাগ্যে দুর্দশা নেমে আসবে। দেখা যাবে করোনাভাইরাসে নয় বরং না খেয়ে মরতে হবে।
সদর উপজেলার বাদিয়াখালী এলাকার যুবক আব্দুল বাকি বলেন, হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন-আয়ের মানুষ বিপদে পড়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে যদি চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলবে। তাই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
দাম বাড়ানোর বিষয়ে বোনারপাড়া বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান বলেন, চালের আড়ত থেকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে, সে জন্য চাল বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা যদি কম দামে চাল কিনতাম তাহলে কম দামে বিক্রি করতাম।
আরেক ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী বলেন, বড় বড় চালের দোকান বন্ধ রাখায় দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যেই বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা হলে তিনি বলেন, চালের বাজার নিয়ে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট করার কোনো সুযোগ নেই। শুক্রবার সকাল থেকেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ যদি চাল মজুত রাখার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাহিদ খন্দকার/বিএ