ফেরিওয়ালার দেয়া খবরে গ্রামের ৩৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি
বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম একটি গ্রামে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন নারী-শিশুসহ ৩৩ জন। সোমবার (১৬ মার্চ) দুপুরে স্থানীয় লোকজন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আক্রান্ত ৩৩ জনকে লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পুরাতন লাইল্যা মুরুং পাড়ায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হন তারা। দুপুরে টলি ও ট্রাক্টর দিয়ে তাদের হাসপাতালে আনা হয়। এর আগে শুক্রবার অজ্ঞাত এই রোগে দুতিয়া মুরং নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়।
লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহামুদুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অজ্ঞাত রোগটি হাম। রোগটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আক্রান্তদের রক্তের নমুনা স্বাস্থ্য বিভাগের গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। মেডিকেল টিম আক্রান্তদের সেবা দিচ্ছে। হাসপাতালের একটি কক্ষে ৩৩ জন রোগীকে আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুরাতন লাইল্যা মুরুং পাড়ার পাড়াপ্রধান লাতুং কারবারি বলেন, এক মাস ধরে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে দুতিয়া মুরং (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পাড়ার লোকজন সবাই অসুস্থ।
লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, কারও গায়ে হালকা ঘামাচির মতো দেখা যাচ্ছে আবার কারও গায়ে তা দেখা যাচ্ছে না। মুখ লাল হয়ে গেছে, অনেকের মুখ দিয়ে রক্তও বের হচ্ছে। আক্রান্তরা অনেক দিন ধরে জ্বরে ভুগছে, তাদের শরীর ব্যথা। সোমবার সকালে ট্রাক্টর দিয়ে তাদের হাসপাতালে আনা হয়। না হলে আরও কয়েকজন মারা যেত। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের চিকিৎসা ও খাবারের খরচ বহন করব।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের পুরাতন লাইল্যা মুরুং পাড়ার আট পরিবারের প্রায় ৭০ জন শিশু, নারী ও পুরুষ সবাই অজ্ঞাত এই রোগে আক্রান্ত। ইতোমধ্যে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত শিশুটি পাড়ার মেনহাত ম্রো’র ছেলে। আক্রান্তদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ ৩৩ জনকে লামা হাসপাতালে আনা হয়। ওই পাড়াটি লামা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দূরে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম এলাকা এটি। ওই এলাকায় ফেরিতে ব্যবসা করতে গিয়ে আব্দুল কাদের নামে এক ফেরিওয়ালার নজরে বিষয়টি আসে। তার মাধ্যমে সবাই জানতে পারেন গ্রামের সবাই অসুস্থ। তার দেয়া খবরে ৩৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে খবর পেয়ে এসব রোগীকে হাসপাতালে দেখতে যান লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ জান্নাত রুমি ও লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল হক।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন অংসুই প্রু মারমা বলেন, আক্রান্তদের শরীরে হামের মতো গুটি উঠেছে। তারা মারাত্মকভাবে অসুস্থ। পাড়ার আশপাশে যাতে রোগ ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সেখানে একটি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
সৈকত দাশ/এএম/জেআইএম