পাঁচ বছর ধরে ফাইলবন্দি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর!
প্রায় পাঁচ বছর ধরে ফাইলবন্দি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর নির্মাণ প্রকল্প। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি রক্ষায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে এ যাদুঘর নির্মাণের কথাছিল। ২০১৪ সালের দিকে রাজশাহীতে কারা একাডেমি নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়ার সময় এ যাদুঘর প্রকল্পটিও নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
এরই মধ্যে এগিয়ে চলেছে কারা একাডেমি নির্মাণকাজ। কিন্তু ফাইলই নড়েনি যাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পের। সেই ফাইলের হদিস নেই রাজশাহী গণপূর্ত দপ্তরে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কারাবন্দি হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এক সময় বর্তমান রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদও তার সঙ্গে একই সেলে কারাবন্দি ছিলেন। কারাগারের যে সেলে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেখানেই ওই জাদুঘর নির্মাণের প্রস্তাব দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। তবে কবে নাগাদ এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন। তার দাবি, তিনি সম্প্রতি এ কারাগারে যোগদান করেছেন। এ নিয়ে কিছুই জানা নেই তার। আগের জেল সুপার বিয়ষটি তাকে অবগত করেও যাননি। ফলে এ প্রকল্পের অগ্রগতিও জানা নেই তার।
শুরুর দিকে বিষয়টি দেখভাল করছিলেন রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এবিএম হুমায়ুন কবীর। তিনিও দেড় বছর আগে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন।
প্রকল্প প্রস্তাবনার বছর খানেকের মাথায় নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছিলেন, স্থাপত্য বিভাগ থেকে তারা নকশা অনুমোদন পাননি। ফলে বাজেট প্রণয়নসহ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরই করতে পারেননি।
এ দীর্ঘ বিলম্বের কারণ জানাতে পারেননি রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ এর বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ রানা। তিনি জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত ফাইলপত্র তার কাছে নেই। দেড় বছর হলো তিনি এখানে দায়িত্বপালন করছেন। এ প্রকল্প সংক্রান্ত নথিপত্র এ সময়ের মধ্যে তার কাছে আসেনি। ফলে তিনিও এ প্রকল্পটির অগ্রগতি জানেন না।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘর নির্মাণের গণপূর্ত বিভাগকে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিল কারা বিভাগ। সেই সময় অভ্যন্তরের ওই জায়গাটি সাইনবোর্ড দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এরপর দফায় দফায় স্থানটি পরিদর্শন করেন গণপূর্ত ও কারা দপ্তরের কর্তারা। পরে সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যে সেলটিতে ওই সময় অবস্থান করেছেন তা ছিল কারাভ্যন্তরের উত্তর-পূর্ব কোণের দেওয়ানী ফটকে। হালের দৈমহলা ভবনের উত্তরে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি ছিল এক কক্ষবিশিষ্ট ওই সেলটি। চুন সুড়কির গাঁথুনির ওই ভবনটির পূর্ব ও দক্ষিণ দেয়ালে ছিল ৫টি জানালা। পরে দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু সেল পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল।
তবে ২০০৮ সালের শেষ ও ২০০৯ সালের প্রথম দিকের বিভিন্ন সময় কয়েদিদের দিয়ে ওই সেলের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নেন তৎকালীন সিনিয়র জেল সুপার হারুন-অর-রশিদ। আর এতে নির্দেশনা দেন তৎকালীন ডিআইজি প্রিজন্স মেজর হাফিজুর রহমান খান। তবে পরে তা অস্বীকার করেন মেজর হাফিজুর রহমান খান।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন সিনিয়র জেল সুপার হারুন-অর-রশিদ সাময়িকভাবে বহিষ্কার হন। দায়ের করা হয় বিভাগীয় মামলাও।
এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি জমা দেয়া প্রতিবেদনে জানায়, কারাভ্যন্তরের এক পাশে ওই স্থাপনার কিছু ইট পেলেও লোহা-লক্কড় কিংবা কাঠ পাওয়া যায়নি। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তা আগেই সরিয়ে নেয়া হয় বলে জানিয়েছিল তৎকালীন কারা কর্তৃপক্ষ। এরই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত হন তৎকালীন সিনিয়র জেল সুপার হারুন-অর-রশিদ।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর নির্মাণ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স অসীম কান্তি পাল জানান, কারা একাডেমী নির্মাণকাজ কাজ চলমান। এটি একটি বড় প্রকল্প।
এছাড়া রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্প এখনও অনুমোদন মেলেনি। ওই প্রকল্পে কারা অভ্যন্তরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর নির্মাণকাজ যুক্ত থাকতে পারে।
তাছাড়া দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধু সংশ্লিষ্ট একটি প্রকল্প নিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানেও এ প্রকল্পটি থাকতে পারে। তবে এনিয়ে পরিষ্কার করে তিনিও কিছুই জানাতে পারেননি।
এমএএস/জেআইএম