খুলনায় চিংড়িতে পুশ বিরোধী অভিযান নেই
অভিযান ঝিমিয়ে পড়ায় খুলনার অধিকাংশ মৎস্য ডিপো ও চাতালে অবাধে চলছে চিংড়ির দেহে অপদ্রব্য পুশ। মাছ কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় চিংড়ির দেহে অপদ্রব্য পুশ ও ভেজানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দেদারছে। তারা চিংড়ির ওজন বাড়িয়ে বহাল তবিয়তে সেগুলো বিভিন্ন মাছ কোম্পানিতে বিক্রি করছে।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এ অবস্থা বন্ধ করতে না পারলে পুরো সেক্টরে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনার মহানগরীর রূপসা নতুন বাজার, পূর্ব রূপসা, কয়রা উপজেলার ৭টি চাতাল, ফুলতলার জামিরা বাজার, ডুমুরিয়ার শাহাপুর বাজার, খর্ণিয়া বাজারসহ বিভিন্ন মাছের ডিপো ও চাতালগুলোতে চিংড়ির দেহে অপদ্রব্য (হার্ডপুশ) প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ অধিদফতর র্যাবের সহায়তায় মহানগরীসহ বিভিন্ন উপজেলার মাছের ডিপো ও মাছ কোম্পানিতে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ বিরোধী অভিযান চালালে অসাধু ব্যবসায়ীরা নতুন কৌশল অবলম্বন করে। তারা গলদা ও বাগদা চিংড়ির দেহে অপদ্রব্য পুশ করে চট্টগ্রাম, কুলের চর, চাঁদপুর, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, ফেনীসহ বিভিন্ন স্থানে গোপনে পিকআপ ও ট্রাকে করে ওইসব এলাকার বিভিন্ন মৎস্য আড়ত ও মাছ কোম্পানিতে বিক্রি করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার বড় বড় নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ অপদ্রব্য পুশ করা চিংড়ি ক্রয় করা হয়। এ সকল প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত রিসিভ ইনচার্জ ও কারখানায় মান নিয়ন্ত্রণ (কিউসি) পদে দায়িত্বশীলরা পুশ করা চিংড়ি অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে গ্রহণ করছে।
এ সেক্টরকে টিকিয়ে রাখতে তাদের কোনো তৎপরতা নেই বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এদিকে গত কয়েক মাস ধরে পুশ বিরোধী অভিযানে কোস্টগার্ড রূপসা স্টেশনের সদস্যদের কোনো অভিযান নেই বলে চিংড়ি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ রয়েছে।
রূপসা চিংড়ি বণিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল মান্নান শেখ জানান, বিভিন্ন চিংড়ি ডিপো মালিকরা ও চাতাল মালিকরা চিংড়ির দেহে ওজন বাড়ানোর জন্য অপদ্রব্য পুশ করে। প্রতি কেজি গলদা চিংড়িতে ৩০০ গ্রাম করে পুশ ব্যবহার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, যখন খুলনায় মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দফতরের অভিযান চালানো হয় তখন কতিপয় মৎস্য ব্যবসায়ী হার্ডপুশ করা চিংড়ি চট্টগ্রাম, কুলের চর, চাঁদপুর, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, ফেনীসহ বিভিন্ন স্থানে পিকআপ ও ট্রাকে নিয়ে ওইসব এলাকার মৎস্য ডিপো ও মাছ কোম্পানিতে বিক্রি করে। ব্যবসায়ীরা যাতে এসব চিংড়ি খুলনার বাইরে বিক্রি করতে না পারে এ ব্যাপারে মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দফতরের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে এ সেক্টরকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দফতর খুলনার উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার জাগো নিউজকে জানান, এখন থেকে চিংড়িতে পুশ বিরোধী অভিযান চলবে। প্রত্যেকটি মৎস্য ডিপো ও আড়তে খুব শিগগিরই সচেতনতা সভার মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে। কোন এজেন্টের মাধ্যমে এ ব্যবসায়ীরা চিংড়ি বিক্রি করে তা চিহ্নিত করা হবে এবং মাছ কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে পুশ করা চিংড়ি ক্রয়ের জন্য নিষেধ করা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান মালিক আইন মেনে না চলবে সেসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
আলমগীর হান্নান/এসএস/এমএস