এবার এসপির উদ্যোগে দৌলতদিয়ায় আরেক যৌনকর্মীর জানাজা
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে ওসির পর এবার এসপির উদ্যোগে আরেক যৌনকর্মীর জানাজা নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে পতিতাপল্লীর পাশে রিনা বেগম নামের ওই যৌনকর্মীর জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে তাকে পল্লীর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের উদ্যোগে গোয়ালন্দ থানা জামে মসজিদের ইমাম আবু বক্কর সিদ্দিক এ জানাজা নামাজ পড়ান।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে যৌনকর্মী রিনা বেগম মারা যান। পরবর্তীতে বিষয়টি রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারের কানে যায়। তাৎক্ষণিক তিনি ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী ওই যৌনকর্মীর জানাজা নামাজ পড়ানোর উদ্যোগ নেন।
কিন্তু যৌনকর্মী বলে স্থানীয় কোনো ইমাম তার জানাজা পড়াতে রাজি হননি। তাই গোয়ালন্দ ঘাট থানা মসজিদের ইমামকে সাথে নিয়ে তার জানাজা নামাজ পড়ানোর ব্যবস্থা করেন পুলিশ সুপার।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দেশের বৃহৎ পতিতাপল্লী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া। এখানে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার বাসিন্দার বসবাস এবং যৌনকর্মীর সংখ্যা প্রায় ১২০০। যৌনকর্মী বা পতিতাপল্লীর বাসিন্দা বলে এদের মৃত্যুর পর কোনো ইমাম জানাজা পড়াতে রাজি হন না। যে কারণে মৃত্যুর পর তাদের কলসি বেঁধে পদ্মায় ডুবিয়ে অথবা মাটিচাপা দেয়া হতো। প্রচলিত এই রেওয়াজ ভেঙে চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কোনো যৌনকর্মীর জানাজা পড়ানোর মাধ্যমে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান।
তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে দ্বিতীয়বারের মতো আরেকজনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় বাসিন্দাসহ পল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তির দেখা মেলে।
জানাজা নামাজে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল জব্বার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাহ উদ্দিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান ও দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডলসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশে প্রথমবারের মতো দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর যৌনকর্মী হামিদা বেগমের মৃত্যুর পর জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। ওই জানাজা নামাজের পর দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম সুন্দরভাবে বিষয়টি তুলে ধরে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন জাগে। যা আজকের জানাজার মাধ্যমে স্বাভাবিক মনে হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এর আগে এমনভাবে কোনো যৌনকর্মীর জানাজা হয়নি। চলতি মাসের প্রথমে একটা জানাজা হলেও তেমন মানুষ উপস্থিত হয়নি। কিন্তু আজকের জানাজায় অনেক মানুষ উপস্থিত হয়েছে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল জব্বার বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল, যা আজ পুলিশের চেষ্টায় বাস্তবে পূর্ণতা পেয়েছে। এতে আমি অনেক খুশি। এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে সে জন্য পুলিশ সুপারকে অনুরোধ জানাই।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আল্লাহ সর্বশক্তিমান, আল্লাহ ক্ষমাশীল। একজন মানুষের শেষযাত্রায় সামাজিক কারণে যদি জানাজা না দেই, তাহলে মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি অবিচার করা হবে। সেই আলোকে প্রথম যৌনকর্মীর জানাজা শেষে আজ দ্বিতীয় যৌনকর্মীর জানাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহর সৃষ্টিকে ভালোবাসলে আল্লাহকে ভালোবাসা হবে। মানুষ যতই পাপী হোক, সে আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষ হিসেবে আল্লাহর কাছে যাওয়ার অধিকার রয়েছে সবার। সে অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত না হোক।
রুবেলুর রহমান/এএম/বিএ