ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন বৃহস্পতিবার

প্রকাশিত: ০২:০৬ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৫

বৈরিতা নিয়ে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে পুনর্গঠন করা হবে জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটি।

মুখোমুখি লড়ছে দুইটি প্রতিদ্বন্দ্বি প্যানেল। একটি বর্তমান সভাপতি অ্যাড. দীপেন দেওয়ান ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মামুনুর রশিদ মামুনের নেতৃত্বে অপরটি বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম এবং যুগ্ম-সম্পাদক দীপন তালুকদারের নেতৃত্বে।

জানা যায়, সভাপতি পদে লড়ছেন অ্যাড. দীপেন দেওয়ান ও মো. শাহ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন মামুনুর রশিদ মামুন ও দীপন তালুকদার। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দীপেন গ্রুপে লড়ছেন সেলিম উদ্দিন বাহারি এবং মো. শাহ আলম গ্রুপে লড়ছেন সাইফুল ইসলাম পনির। উভয় গ্রুপের সমর্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। এ দুই গ্রুপের মধ্যে বিরাজ করছে চরম বৈরিতা। মুখোমুখি উভয়ে। এবার সম্মেলনে গ্রুপ দুটির অবস্থান মূলত গড়ে উঠেছে মূলধারা এবং সুবিধাবাদকে ঘিরে।

জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুন্নবী বলেন, এটা বিএনপিকে ধ্বংস করার চক্রান্ত। যেখানে বিএনপি মিছিল-সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। সেখানে পাহাড়িমুক্ত বিএনপি গঠনের দাবিতে বের করা মিছিলে পুলিশের উপস্থিতিও ছিল না। এটাই প্রমাণ করে এর পেছনে কারা জড়িত।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল গত ৩০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তা পেছানো হয়েছে ৮ অক্টোবর।

জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গণতান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নির্বাচন হবে তিন শীর্ষ পদে। এ তিনটি পদের মধ্যে সভাপতি পদে অ্যাড. দীপেন দেওয়ান ও সম্পাদক মো. শাহ আলম। বৃহস্পতিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে জেলা যুগ্ম-জজ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন অ্যাড. দীপেন দেওয়ান। সেই সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে উপ-মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা রাঙ্গামাটির এমপি মণি স্বপন দেওয়ানের পরিবর্তে ২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় দীপেন দেওয়ানকে। কিন্তু দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর ২০০৭ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়।

অপরদিকে, মনোনয়ন না পেয়ে দল থেকে বেরিয়ে এলডিপিতে চলে যান তৎকালীন পার্বত্য উপ-মন্ত্রী মণি স্বপন দেওয়ান। একই সময়ে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে দেশের বাড়ি সিলেট চলে যান দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্বে থাকা তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিন আহমেদ। তেমনি এক ক্রান্তিলগ্নে দলের হাল ধরেন দীপেন দেওয়ান। জরুরি অবস্থার মধ্যেও জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে তৃণমূলে ভেতরে ভেতরে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করে তোলেন তিনি।

দীপেন দেওয়ানের নেতৃত্বে সুসংগঠিত হন উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি দীপেন দেওয়ানের হাত ধরে দলে দলে বিএনপিতে যোগদান করেন বহু পাহাড়ি নেতাকর্মী। ২০০৯ সালের ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সম্মেলনে জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন অ্যাড. দীপেন দেওয়ান। দীপেন দেওয়ানের বাবা স্বর্গীয় সুবিমল দেওয়ান ছিলেন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা।

অন্যদিকে, সম্মেলনকে ঘিরে এখন দুটি গ্রুপে বিভক্ত রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপি। বর্তমানে উভয় গ্রুপে বিরাজ করে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা। জানা যায়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির মধ্যকার দলীয় কোন্দল দীর্ঘদিনের। সম্মেলন ঘিরে বিরোধ চরম আকারে রূপ নিয়েছে।

নেতাকর্মীদের অনেকে জানান, মূল গ্রুপটি চাইছে রাঙ্গামাটিতে অসম্প্রদায়িক রাজনীতির বিশ্বাসে বিএনপির একটি শক্তিশালী কমিটি পুনর্গঠন করতে। কিন্তু কতিপয় নেতার ইশারায় উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদ তুলে বিরোধী গ্রুপটি মরিয়া পাহাড়ি নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে পাহাড়িমুক্ত বিএনপি পুনর্গঠনে।

তাদের অভিযোগ, জেলা বিএনপির কতিপয় নেতা চাইছেন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্রের শক্তি বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য। জড়িতরা ক্ষমতাসীনদের ইশারায় কল-কাঠি নাড়ছেন। উপজেলা কমিটি পূর্নঠনের সময়েও যোগ্য পাহাড়ি নেতাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাঘাইছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় পাহাড়ি ভোটারদের অনুপস্থিতিতে মনগড়া পকেট কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

এমন অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে জেলা বিএনপির সভাপতির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন বিলাইছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবীন্দ্র লাল চাকমা। তিনি বলেন, বিলাইছড়ি উপজেলায় গঠনতন্ত্রের পরিপন্থীমূলকভাবে প্রয়োজনীয় ভোটারদের অনুপস্থিতিতে মনগড়া কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেটি কখনও মেনে নেয়া যায় না।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/এআরএ/পিআর