ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পোড়াদহ মেলায় ৭২ কেজির বাঘাইড়, নজর কাড়ছে ১০ কেজির মাছ-মিষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক | বগুড়া | প্রকাশিত: ০৫:২০ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় ৭২ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছের দাম হাঁকা হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। যমুনা নদী থেকে ধরা মাছটি ঘিরে বুধবার ছিল উৎসুক ক্রেতাদের ভিড়।

ব্যবসায়ী বিপ্লব মেলায় বিক্রির উদ্দেশ্যে মইনুল নামের এক জেলের কাছ থেকে মাছটি কিনে নিয়ে আসেন। তিন মাস আগে যমুনা থেকে মাছটি ধরা হলেও পানিতে চৌবাচ্চা বানিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় সেটি জ্যান্ত রাখা হয়।

পোড়াদহ মেলা দেশের উত্তরাঞ্চল বগুড়ার জেলার ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রাচীন লোকজ মেলা। শহর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ নামক স্থানে প্রতি বছর এ মেলা বসে। বাংলাদেশে যে কয়টি গ্রাম্যমেলা পুরাতন জৌলুস নিয়ে সগর্বে টিকে আছে তার মধ্যে বগুড়ার ‘পোড়াদহ মেলা’ অন্যতম। আগামীকাল বৃহস্পতিবার একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে বউমেলা।

মূল মেলা সরকারি তত্ত্বাবধানে আয়োজিত হলেও বউমেলা স্থানীয় গ্রামবাসীর উদ্যোগে হয়। গ্রামের যেসব মহিলা কাজের চাপে অথবা রক্ষণশীল মানসিকতার কারণে মূল মেলায় যেতে পারেন না তাদের জন্যই বিশেষ করে এ মেলার আয়োজন। বউমেলার একটি বিশেষত্ব হলো- এখানে বিবাহিত (নিজ নিজ স্বামীর সঙ্গে) ও অবিবাহিত নারীরা প্রবেশ করতে এবং কেনাকাটা করতে পারেন। বিক্রেতাদের অধিকাংশই নারী।

mala

মেলায় ওঠা ১০ কেজি ওজনের মাছ-মিষ্টির ওপরও ছিল ক্রেতাদের বিশেষ আকর্ষণ

এ মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের তিন উপজেলাজুড়ে। রাত থেকেই ব্যবসায়ীরা বিশাল আকৃতির মাছ মেলায় নিয়ে আসেন। রুই, কাতলা, ব্রিগেড, বাঘাইড়সহ বিভিন্ন ধরনের মাছের দেখা মেলে মেলায়। পাশাপাশি মেলার অন্যতম আকর্ষণ মাছ আকৃতির ১০ কেজি ওজনের মিষ্টিসহ হরেক রকমের মিষ্টি।

বুধবার সকাল থেকে উপজেলাসহ জেলা শহর এবং এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারও মানুষ ভিড় করেন পোড়াদহের মেলায়। এখানে নাগরদোলা, চরকি, সার্কাস, জাদুখেলা, মোটরসাইকেল খেলাসহ শিশুদের জন্য নানা ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

পোড়াদহ মেলার প্রধান আকর্ষণ হলো মাছ। মেলায় পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রজাতির হরেক রকমের বড় বড় মাছ। মাছগুলো ভোরে মেলায় স্থাপিত অস্থায়ী আড়তগুলোতে এসে জমা হয়। সেখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা মাছগুলো কিনে মেলার নিজ নিজ দোকানে নিয়ে যান। দোকানগুলোতে দিনভর কেনাকাটা চলতে থাকে। মেলায় আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, কালিবাউশ ও পাঙ্গাশ।

মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ‘বাঘাইড়’, স্থানীয়ভাবে যাকে ‘বাগাইড়’ মাছ বলা হয়। মেলায় দুই মণ থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘাইড় পাওয়া যায়। এছাড়া ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের রুই, কাতলা, পাঙ্গাশ মাছও থাকে। এবারও মেলায় উঠেছে ১২ কেজি ওজনের কাতলা। প্রতি কেজির মূল্য ৭০০ টাকা। ১৫ কেজি ওজনের সিলভার কার্প পাঁচ থেকে ছয়শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৯ কেজি ওজনের ব্লাককার্প ৮৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়।

mala

মেলায় ওঠা ১২ কেজি ওজনের কাতল

মাছ ব্যবসায়ী বিপ্লব জানান, তারা সারা বছর ধরে অপেক্ষা করেন এই দিনের জন্য। একদিনেই মেলায় অন্তত ১০০ মণ মাছ বিক্রি হয়। এছাড়া মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো ‘মাছ মিষ্টি’। ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের দোকানে রয়েছে একটি মিষ্টি। এর ওজন ১০ কেজি। প্রতি কেজি তিনশ টাকা করে বিক্রি করছেন তিনি।

জানা গেছে, মেলার স্থান পোড়াদহ এলাকায় হলেও মেলাটি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন স্থানে। পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে মেলা বসে সুবোধ বাজার, দুর্গাহাটা, বাইগুনী, দাঁড়াইল, তরণীহাট, পেরীহাটসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে। এই মেলায় পাওয়া যায় কাঠের তৈরি ফার্নিচার। ফার্নিচার কেনা-বেচা মেলার দিন ছাড়াও পরের দুদিনও চলে। এছাড়া বিভিন্ন আসবাবপত্র, কৃষিসামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য হাট-বাজারের মতোই বিক্রি হয়।

এই মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজে মেতে ওঠেন আশপাশের গ্রামের মানুষ। তবে মেলাটি একদিনের হলেও চলে দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত। এ মেলায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। ঈদ বা অন্য কোনো উৎসবে জামাই-মেয়েদের কিংবা নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত না দিলেও পোড়াদহ মেলায় সবাইকে দাওয়াত দিয়ে ধুমধাম করে খাওয়াতে অত্র এলাকার রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। মেলা উপলক্ষে এই এলাকার গৃহবধূরা আগেভাগেই ঘর-দুয়ার পরিষ্কার করা, মুড়ি-খৈ ভাজা, নারিকেলের নাড়ু তৈরি করেন। গ্রামের জামাইরা মেলায় গিয়ে বড় বড় মাছ কিনে আনেন।

mala

মেলা প্রাঙ্গনে দেখা মেলে হরেক রকমের দেশি মাছ

মেলার পরিচালক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মেলায় নাগরদোলা, চরকি, সার্কাস, জাদুখেলা, মোটরসাইকেল খেলাসহ শিশুদের জন্য নানা খেলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

থানার ওসি সাবের রেজা আহমেদ বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মেলায় কোনো প্রকার জুয়া কিংবা অশ্লীল নাচ-গানের অনুমতি দেয়া হয়নি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ ঠান্ডু জানান, মেলা মানেই আনন্দ, উল্লাসে মেতে ওঠা। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়। নিমন্ত্রণ দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন-পুরোনো বিবেচনা করা হয় না। কারণ মেলা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। সেই ঐতিহ্য ধারণ করে সবাই মেতে ওঠেন বাঁধ ভাঙা উৎসব-উচ্ছ্বাসে।

এমএআর/জেআইএম