ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মুই কিডনি বেচি ছাওয়ালের চিকিৎসা করাইম

প্রকাশিত: ০৬:২৬ এএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৫

অনেকেই হাসপাতালে এসে টাকা দেবার কথা বলেছিলেন কিন্তু কেউ দেননি। এনজিও থেকে ঋণ এবং স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে সুদের উপর নেয়া টাকাই যেন শিশু সৌরভের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা। কতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে তারও নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না সৌরভের পরিবার।

আর কত ধার-দেনা করলে সুস্থ হবে এ শিশুটি? এ দুশ্চিন্তায় দুই চোখে এখন ঘোর অমানিশাই দেখছেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের ছোড়া গুলিতে আহত শিশু শাহাদৎ হোসেন সৌরভের (১০) বাবা সাজু মিয়া ও মা সেলিনা বেগম।

মঙ্গলবার হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় সাজু মিয়া ও স্ত্রী সেলিনার সঙ্গে। সাজু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, গ্রামে গ্রামে ফেরি করে হাড়ি-পাতিল বেচি। বড় ছেলে শামীম গোপালচরণ উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। যা আয় হয় তা দিয়েই কোনোরকমে টানাটানি করে ছেলেদের লেখাপড়া আর সংসার চলে। হাড়ি-পাতিল কাঁধে করে বেচে সৌরভের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছেন না তিনি।

সাজু জানান, ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন পৌর চেয়ারম্যান। এরই মধ্যে ৩৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।  সৌরভকে পুরোপরি সুস্থ করে গড়ে তুলতে আরও কত টাকা লাগবে তার হিসেবও জানেন না তিনি।

হতভাগ্য বাবা সাজু মিয়া হাল ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাইলেও মা সেলিনা বেগমের মন তাতে সায় দিচ্ছে না। এখন বাবা-মায়ের স্বপ্ন একটাই, অনেক আদরের ছোট ছেলে সৌরভ আবারও হাঁটবে, স্কুলে যাবে, অনেক বড় মানুষ হবে। বুকের ভেতর লালন করা স্বপ্ন এমন অবেলায় নষ্ট করতে চাইছেন না তারা। প্রয়োজনে নিজের কিডনি বিক্রি করে হলেও ছেলের চিকিৎসা করাবেন। এমনটাই জানালেন মা সেলিনা বেগম।

তিনি আক্ষেপ করে জাগো নিউজকে বলেন, কি এমন পাপ করছিনু বাহে যে, এত বড় শাস্তি পাইনো হামরা। গরিব মাইনষেক (মানুষকে) সবায় মারে। যায় এমন করিল তার কি বিচার হইবে না? মোর ছওয়াক ভালো করতে দরকার হয় মুই কিডনি বেচিম।  

ব্যাথা কমেছে কি না-জানতে চাইলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা সৌরভ জানায়, ডান পায়ে ব্যাথা কমলেও বাম পায়ে এখনো কমেনি।

জাগো নিউজের প্রতিবেদককে চিকিৎসক ভেবে সরল শিশু সৌরভ বলে ওঠে “মুই ভালো হবার চাং। কৎদিন নাগবে ভালো হইতে?”

তার সরল মনের এ আকুতিই যেন বলে দেয় সৌরভ সুস্থ হয়ে উঠবে। আবার আগের মতো গ্রামের মাঠ-ঘাট চষে বেড়াবে। স্কুলে যাবে। তবে এর জন্য যে আর্থিক সহায়তার দরকার তা ফেরিওয়ালা সাজু কতটাই বা বহন করতে পারবে। এজন্য সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন সাজু ও তার স্ত্রী সেলিনা। সাহায্য পাঠাতে চাইলে বিকাশ নম্বর-০১৭৩৮-৩৩৪০৬৯ (ব্যক্তিগত)।

সৌরভের বিষয়ে শিশু সার্জারি ওয়ার্ডের ইনচার্য সহকারী অধ্যাপক ডা. বাবুল কুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, সৌরভের সংক্রমণ যেন না হয় সেদিকটা আমরা ভালো করেই খেয়াল রাখছি।

কতদিন লাগবে পুরোপুরি সুস্থ হতে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না তবে সময় লাগবে। সৌরভ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

শিশু বয়সে এমন আঘাত পেয়ে সৌরভ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কি না? জানতে চাইলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জ্যোতির্ময় রায় জাগো নিউজকে বলেন, শিশু সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা যদি মনে করেন যে তার মানসিক কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে তাহলে আমাদের কাছে রেফার্ড করবে। রেফার্ড করলে আমরা তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।

উল্লেখ্য, প্রতিদিনের ন্যায় গত শুক্রবার ভোরে সৌরভ (১০) বাড়ির পাশের রাস্তায় হাঁটতে বের হয়। এসময় ওই পথ দিয়ে গাড়িতে করে এমপি লিটন বামনডাঙ্গাস্থ তার নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। গোপালচরণ গ্রামের ব্র্যাক মোড় কালাইর ব্রিজ এলাকায় পৌঁছে হঠাৎ করে গাড়ি থেকে সৌরভকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি ছোড়েন লিটন। এতে সৌরভ দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়।

পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সে বর্তমানে হাসপাতালের ৫ম তলার ১৮ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এমজেড/আরআইপি