ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের ছবি ইন্টারনেটে ছাড়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০১:২০ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০১৫

রাঙামাটিতে আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে এলাকার বহু মেয়ের সম্ভ্রমহানির চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই আওয়ামী লীগ নেতার ধর্ষণের শিকার অনেক মেয়ে সবকিছু হারিয়ে বর্তমানে সম্পূর্ণ অসহায়। তারা এখন লোক-লজ্জার ভয়ে ঘরের বাইরেও যেতে পারছেন না।

মঙ্গলবার রাঙামাটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ধর্ষণ ও প্রতারণার শিকার মেয়ে ও পরিবারের লোকজন। তারা ওই লম্পট, প্রতারক ও সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ নেতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

সকালে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ধর্ষিতা, তাদের পরিবার ও এলাকার লোকজন অভিযোগ করে বলেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার দুলাল তালুকদারের অত্যাচারে নিরীহ এলাকাবাসী এখন অতিষ্ট। বিশেষ করে তার অপকর্মের শিকার এলাকার নিরীহ মেয়েরা। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার অসহায় ও সুন্দরী মেয়েদের নানা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের পর ব্ল্যাকমেইল করে তাদের মারাত্মক সর্বনাশ করছেন দুলাল মেম্বার। উপর্যুপরি ধর্ষণের পর উলঙ্গ ছবি তুলে সেগুলো পরে তার কথার বাইরে গেলে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেন এবং মোবাইলে ও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। দুলাল মেম্বারের ক্ষমতার দাপটে জিম্মি নিরীহ লোকজন। তার অনেক দাপট। তিনি একাধারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি, ওয়ার্ড মেম্বার এবং আনসার বাহিনীর স্থানীয় পিসি। তার সব অপকর্ম হয় পুলিশকে ম্যানেজ করে। সেজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে থানায় মামলা নেয়া হয় না। এছাড়া তার রয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী। নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ত্রাস সৃষ্টি করে নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন দুলাল মেম্বার। আমরা লম্পট দুলাল মেম্বারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

সংবাদ সম্মেলনে দুলাল মেম্বারের ধর্ষণের শিকার এক গৃহবধূ বলেন, প্রায় এক বছর আগে দুলাল মেম্বার আমার বাবার মামলা সংক্রান্ত এক কাজে বাবার সঙ্গে রাঙামাটি শহরে যেতে বলেন। তার কথায় আমরা রাঙামাটি শহরে যাই। কিন্তু অনেক কুট-কৌশলে আমাকে হোটেল প্রবাসী নামে একটি বোর্ডিংয়ে তার সঙ্গে আলাদা রুমে রাখেন দুলাল মেম্বার। তখন একা পেয়ে জোরপূর্বক আমার সর্বনাশ করেন তিনি। রাতভর ধর্ষণ করেছেন। আমি লজ্জায়-ভয়ে কিছুই করতে পারিনি। উপর্যুপরি ধর্ষণের পর আমার উলঙ্গ ছবি মোবাইলে ধারণ করেন। পরে আমাকে বলেন, মাহফুজের বিরুদ্ধে সম্ভ্রমহানির অভিযোগ করতে হবে। অন্যথায় ইন্টারনেটে ওই ছবিটি ছেড়ে দেয়া হবে। তখন আমার বিয়ে হয়নি। আমি প্রতিবেশি ওই মাহফুজের সঙ্গে প্রেম করতাম। কিন্তু ঘটনার পর দুলাল মেম্বারের হুমকির মুখে আমাকে মাহফুজের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করতে হয়েছে। এক পর্যায়ে মাহফুজকে সব খুলে বলি। কিন্তু সব জেনেও মাহফুজ শেষে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হওয়ায় পরে আমাদের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর দুলাল মেম্বার আমার উলঙ্গ ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে মোবাইলে এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

ভিকটিমের স্বামী ভূষণছড়া ইউনিয়নের এরাবুনিয়ার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মনির মাস্টারের ছেলে মাহফুজ বলেন, গত বছরের দিকে একদিন দুলাল মেম্বার আমাকে ডেকে ২ লাখ টাকা দাবি করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে নাকি এক মেয়ের সম্ভ্রমহানির অভিযোগ আছে। সেটির মিমাংসার জন্য ২ লাখ টাকা লাগবে। অন্যথায় মামলা দিয়ে পুলিশে দেয়া হবে। আমি টাকা দিইনি। তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেন দুলাল তালুকদার। মামলায় ছয় মাস জেল খাটতে হয়েছে। জেল থেকে ফিরে রেহাই পেতে আমি ওকে (ভিকটিম) বিয়ে করেছি। কিন্তু এরপরও দুলাল মেম্বারকে ৭০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এখন আমাদের দুইজনসহ পরিবারের লোকজনকে সব সময় হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন দুলাল মেম্বার।

ওই ধর্ষিতার বাবা মনোয়ার গাজী বলেন, আমিও একজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। সেই সুযোগে লম্পট দুলাল মেম্বার আমার মেয়ের সঙ্গে পরিচিত হন। একদিন মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে মেয়ের সাক্ষ্য দরকার আছে কথা বলে মেয়েকে রাঙামাটি শহরে আনতে বলেন দুলাল মেম্বার। সেই সুযোগ নিয়ে আমার মেয়েকে হোটেলে রেখে সর্বনাশ করেন দুলাল মেম্বার। আমি জানতাম না। কিন্তু মেয়েটি অপমান সইতে না পেরে একদিন বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এতে আমি মেয়ের কাছে খোলাখুলি সব জানতে চাই কেন আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলে। তখন মেয়ে সব খুলে বলে। তা জেনে মেয়েকে নিয়ে বরকল থানায় মামলা করতে যাই। কিন্তু থানা পুলিশ মামলা নেয়নি। থানা থেকে বলে দেয়া হয়েছে দুলাল মেম্বারের অনেক ক্ষমতা। তার বিরুদ্ধে মামলা করলে পরিণতি ভালো হবে না। পরে এ ঘটনায় অনেক জায়গায় বিচার চাইতে যাই কিন্তু কোথাও সুবিচার পাইনি।

প্রতিবেশি তরুণী হাফেজা আক্তার ববি বলেন, দুলাল মেম্বার এলাকার কমপক্ষে ২০-৩০ মেয়ের সর্বনাশ করেছেন। তিনি নিজে মেয়েদের ভোগ করার পর অন্যজনের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেন। আবার অর্ধেক টাকায় পুলিশকে ম্যানেজ করে নেন। মেয়েদের নিজে ধর্ষণ করে উলঙ্গ ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করেন। দুলাল মেম্বার এমন ভয়ংকর যে, নিজে ধর্ষণ করে ধর্ষিতার মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে অপরকে ফাঁসিয়ে সালিশ-বিচারের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। আমরা এলাকাবাসী দুলাল মেম্বারের কুকীর্তির বিচার চাই। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সংবাদ সম্মেলনে এছাড়াও ২০-৩০ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে দুলাল মেম্বারের বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন পাঠিয়েছেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে দুলাল তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার ব্যবহার করা মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/এমএএস/আরআইপি