চীনে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের পরিবারে আতঙ্ক
‘আল্লাহ তুই মোর ছুয়াটাক সুস্থ রাখিস, রহমত করিস। মোর ছুয়াটা যাতে সুস্থ থাকে।’ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন চীনে পড়তে যাওয়া মোকছেদুল মমিনের মা মনোয়ারা বেগম। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলাখুড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
ঠাকুরগাঁও থেকে চীনে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য যাওয়া প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে এখন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আতঙ্ক বিরাজ করছে। দ্রুত তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চীনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকরা। দিন দিন দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক বেড়েই চলছে চীনে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের পরিবারে। সেই সঙ্গে চিন্তায় রয়েছেন এলাকাবাসীও।
গত বছর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে মোকসেদুল মমিন পড়াশোনার জন্য চীনে যান। সবকিছু ভালোই ছিল। হঠাৎ টিভিতে চীনে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর খবর দেখে গা শিউরে ওঠে তার পরিবারের। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান সকলেই। ছেলের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ হওয়ার পরও চিন্তার শেষ নেই বাবা-মায়ের।
মোকসেদুল মমিনের বাবা খাদেমুল ইমলাম বলেন, অনেক কষ্টে কৃষিকাজ করে আদরের ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। পড়াশোনা করে বুড়ো বাবা-মায়ের পাশে থাকবে, পূরণ করবে আমাদের সকল স্বপ্ন। কিন্তু এখন তো শুনতেছি সেখানে যে বালাই (ভাইরাস) তাতে কতো লোক মারা গেছে। যদি এই বালাই (ভাইরাস) না কমে তাহলে আমার ছেলেকে সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরিয়ে আনতে আমি প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন করছি।
চীন থেকে এক ভিডিও বার্তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোকছেদুল মমিন বলেন, রুম থেকে বের হতে পারছি না। আমাদের নিষেধ করা হয়েছে। আমরা যাতে খুব প্রয়োজন ছাড়া বের না হই। এমনই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন করছি যাতে দ্রুত আমাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
নাসির উদ্দিন নামে আরেক শিক্ষার্থী ভিডিও বার্তায় বলেছেন, আমাদের ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা সব-সময়ই আমাদের স্বাস্থ্যের খবর রাখছেন। আমরা যারা এখানে এসেছি এখন পর্যন্ত কারও কোনো সমস্যা হয়নি। তবে পরিবার ও স্বজনদের বলতে চাই চিন্তার কারণ নেই। আশা করি আমরা ভালো থাকবো।
ছেলে সৈয়দ আশিকুজ্জামানের জন্য দুশ্চিন্তায় আছেন জেলা সদরের সৈয়দ আব্দুল করিম। ৫ বছর আগে পড়াশোনার জন্য চীনে সন্তানকে পাঠান তিনি। খুব ভালোই যাচ্ছিল চলছিল ছেলেসহ পরিবারের সকলের দিনকাল। চীনের এই ভাইরাসের কথা শোনার পরই যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। ছেলে সন্তান বলেছেন- তিনি সুস্থ। এরপরও আতঙ্কে অভিভাবকরা।
শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাংলাদেশ সরকার চীনে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশি যাতে দেশে আসতে পারে সে ব্যবস্থা করেছে। তবে আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলার বেশ কিছু ছাত্র ও ব্যবসায়ী এখনো চীনে রয়ে গেছে। তাদের মধ্যে একজন একটি ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশে আশার আকুতি জানিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানোর।
প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত চীনে করোনাভাইরাসে ৪৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। আর এ ভাইরাসে ২৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
আরএআর/পিআর