৩ হাজার বিনিয়োগকারীর বিপরীতে কর্মকর্তা একজন
চাঁদপুর জেলা সঞ্চয় অফিসে লোকবল সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। মাত্র একজন কর্মকর্তা দিয়ে চলছে জেলা সঞ্চয় অফিস। সেটিও লক্ষ্মীপুর থেকে ডেপুটেশনে কাজ করা হচ্ছে এখানে। আর তাকে সহায়তা করছেন এই অফিসেরই একজন কর্মকর্তা।
এ অবস্থার মধ্যেই তিন হাজার বিনিয়োগকারী তাদের সেবা নিচ্ছেন। এক কথায় বিনিয়োগকারীরা সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। তার উপর আবার অফিস কক্ষটি খুবই ছোট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিনিয়োগকারীদের অপেক্ষা করতে হলেও তাদের জন্য নেই কোনো বসার জায়গা।
বর্তমানে জেলা সঞ্চয় অফিসার পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আরব থাকার কারণে ৪৫ দিনের জন্য লক্ষ্মীপুর থেকে ডেপুটেশনে চাঁদপুর জেলা সঞ্চয় অফিসে লক্ষ্মীপুরের কর্মকর্তাকে আনা হয়েছে। যেখানে জেলা সঞ্চয় অফিসে সরকারি বিধি অনুযায়ী একজন অ্যাসিসট্যান্ট ডাইরেক্টার, একজন সঞ্চয় অফিসার, একজন অফিস সহকারী ও একজন এমএলএসএস থাকার কথা। অথচ বর্তমানে আছে একজন সঞ্চয় অফিসার ও একজন এমএলএসএস। তারাই তিন সহস্রাধিক বিনিয়োগকারীর সেবা প্রদান করছেন। এতে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।
তাছাড়া অফিসটি ছোট হওয়ায়, জায়গা সঙ্কুলানের জন্য বিনিয়োগকারীদের বসার কোনো জায়গা পর্যন্ত নেই। প্রতিদিন প্রায় তিনশ থেকে চারশ বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ উত্তোলন ও জমা দেয়ার জন্য অফিসে আসেন। কিন্তু লোকবল সঙ্কটে সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
ডেপুটেশনে আসা সঞ্চয় কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস এই বিভাগের উপর দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিনিয়োগকারীরা তাদের লক্ষ লক্ষ টাকা সঞ্চয় অফিসে জমা দিচ্ছেন। কিন্তু অফিসের লোকবল সঙ্কটে সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। বর্তমানে জেলা সঞ্চয় অফিসে মোট তিন হাজার বিনিয়োগকারী রয়েছেন। অফিসে কর্মরত আছেন একজন সঞ্চয় অফিসার আর একজন এমএলএসএস। কিছু দিন পূর্বেও একজন অফিস সহকারী ছিলেন, বর্তমানে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন।
তিনি আরো জানান, কাজের চাপের কারণে সেই অবসরকৃত কর্মকর্তাকে অফিসে ডেকে এনে কাজ করানো হয়। সরকারিভাবে প্রতি অর্থ বছরে সঞ্চয় অফিসগুলোকে টার্গেট বেঁধে দেয়া হয়। চলতি অর্থ বছরে চাঁদপুর জেলা সঞ্চয় অফিসকে ৭৫ কোটি টাকার বিনিয়োগের সঞ্চয়ের টার্গেট দেয়া হয়। শুধু গত তিন মাসেই টার্গেটের এক তৃতীয়াংশ পূরণ হয়ে গেছে।
তারা আশা করছেন, চলতি অর্থ বছরে সরকারের বেঁধে দেয়া টার্গেটের সীমানা পেরিয়ে যাবে। এর মূল কারণ সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারি একটি ব্যাংকে তিন হাজার বিনিয়োগকারীর পেছনে কতজন কর্মকর্তা/কর্মচারী কাজ করছেন, এর বিপরীতে সঞ্চয় অফিসে কতজন কর্মকর্তা কাজ করছেন। এর বিচার করা হলেই সেবার মান কতটুক হবে সেটা বলা মুশকিল। তবে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য সেবাটুকু দিয়ে যেতে। তিনি আরো জাগো নিউজকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা সঠিক সেবা না পেলে এই প্রতিষ্ঠানটিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
জেলা সঞ্চয় অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অনেক বিনিয়োগকারীরা সেখানে বসে আছেন, কেউ সঞ্চিত টাকার মুনাফা উত্তোলন করতে এসেছেন, কেউবা আবার টাকা জমা দিতে এসেছেন। অফিসটিতে দুই-চারজন বিনিয়োগকারী বসতে পারলেও বাকিরা সবাই দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। ফাইল নিয়ে কাজ করছেন সদ্য অবসরে যাওয়া এই অফিসেরই অফিস সহকারী মফিজ। তিনি ফাইল ঠিক করে দিয়ে পাঠিয়ে দেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত সঞ্চয়ী কর্মকর্তার কাছে। তিনি ফাইলে সই করলেই চলে যান তারা সোনালী ব্যাংকে। এ অবস্থা চলে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত।
ডেপুটেশনে আসা জেলা সঞ্চয় অফিসে সঞ্চয়ী অফিসার সপ্তাহে তিনদিন বসেন চাঁদপুর অফিসে। বাকি দুদিন লক্ষ্মীপুর সঞ্চয় অফিসে বসেন। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা অফিসে এসে কোনো কোনো দিন ফিরেও চলে যান।
বিনিয়োগকারীরা জানান, অতি দ্রুত সরকার যেন এই বিভাগের প্রতি নজর দেয়। কারণ, সরকারি চাকরি শেষে অনেক কর্মকর্তা/কর্মচারীরই শেষ বয়সের ভরসা এই সঞ্চয় অফিস। শেষ বয়সে এসে তারা যেন তাদের প্রাপ্ত অর্থ সঞ্চয় অফিসে জমা দিয়ে ভালো সেবাটুকু পান এদিকে সরকার দৃষ্টি দেবেন এবং দ্রুত এই বিভাগটিতে লোকবল নিয়োগ দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করবে।
ইকরাম চৌধুরী/এমজেড/এমএস