নীলগিরি পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের মিতালী
নীলগিরি যেন প্রকৃতির এক অনন্য দান। যেখানে চলে পাহাড় আর মেঘেদের মিতালী। যারা আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেন নীলগিরিতে গেলে তাদের কিঞ্চিত স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। এখানে এলে মনে হবে আপনি আকাশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। মেঘেরা আপন থেকে আপনাকে ছুঁয়ে যাবে।
নীলগিরির চূড়া থেকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং, প্রাকৃতিক আশ্চার্য বগালেক, কক্সবাজারের সমুদ্র, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আলো-আঁধারি বাতি এবং চোখ জুড়ানো পাহাড়ের সারি দেখতে পাওয়া যায়। একবার ঘুরে এলে যেখানে আবারো যেতে মন চাইবে।
আকাশ-মেঘ যেখানে ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। অবারিত সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়। মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের এখানে যেন আজন্ম বন্ধুত্ব। প্রকৃতির এমন বন্ধুত্ব যে কারো মন ভালো করে দেবে মুহূর্তেই। মেঘ পাহাড়ের বন্ধুত্বের পাশাপাশি আপনিও হতে পারেন মেঘের বন্ধু। এখানে এলে মেঘ আপনাকে বন্ধু না বানিয়ে ছাড়বেনা।
বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন স্পট নীলগিরি। জেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের চূড়ায় নীলগিরির অবস্থান। অল্প সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত পর্যটন স্পট নীলগিরি সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে। পাহাড়ি আঁকা বাঁকা পথে বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়ি কিংবা জিপ-মাইক্রো বাসে নীলগিরিতে যাওয়া যায়।
দুর্গম পাহাড়ে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে আকাশ নীলা, মেঘদূত, নীলাতানা নামে তিনটি পর্যটকদের জন্য সকল সুবিধা সম্বলিত তিনটি কটেজ। কটেজগুলো রাত্রিযাপনের জন্য ভাড়া পাওয়া যায় এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে। এখানে এক কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক একটি রেস্টুরেন্টও। পাহাড়ি পথ পেরিয়ে নীলগিরিতে পৌঁছেই রেস্টুরেন্টে আপনি পেট পুরে খেতে পারেন।
নীলগিরির কাছাকাছি রয়েছে বেশ কয়েকটি ম্রো উপজাতীয় গ্রাম। নীলগিরির একদম কাছে কাপ্রুপাড়া আপনি সহজেই পরিদর্শন করে ম্রো আদিবাসী সম্পর্কে জানতে পারবেন। নীলগিরিতে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প। ফলে এখানে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। আর আপনার যেকোন প্রয়োজনে সেনা সদস্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে।
নীলগিরির রাতের সৌন্দর্য আপনাকে আরো হতবাক করবে। চারিদিকের হরিণ, শিয়ালসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণির ডাক পাহাড়গুলোর আলো-আঁধারির খেলা দেখে আপনার জীবনকেই যেন রহস্যময় বলে মনে হবে। যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য রাতের নীলগিরি হতে পারে উৎকৃষ্ট স্থান।
নীলগিরি যাওয়ার পথে আপনি দেখে যেতে পারেন বান্দরবানের অপার সৌন্দর্যময় শৈলপ্রপাত। এখানে আদিবাসী বম তরুণীরা আপনাকে স্বাগত জানাবে। এখান থেকে কিনে নিতে পারেন আদিবাসীদের হাতের তৈরি নানা পণ্য। এরপরই চোখে পড়বে স্বপ্নচূড়া। স্বপ্নচূড়া থেকেও বান্দরবানের অবাক করা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
স্বপ্নচূড়ার পরই বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুকে পৌঁছে যাবেন আপনি। চিম্বুকের সুনাম সারা দেশব্যাপি। এখানে রয়েছে টিঅ্যান্ডটির বিশাল টাওয়ার, উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করেছে সকল সুবিধা সম্বলিত রেস্ট হাউস। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পুরনো একটি রেস্টহাউসও রয়েছে এখানে। চিম্বুকে পৌঁছেই স্থানীয় আদিবাসীদের হাতের তৈরি এক কাপ চা খেয়ে নিজেকে চাঙ্গা করে রওনা দিতে পারেন নীলগিরির দিকে। অথবা এর একটু দূরেই সেনাবাহিনী পরিচালিত ক্যান্টিন রয়েছে। এখানে আপনি সেরে নিতে পারেন দুপুরের খাবার অথবা হালকা খাবার।
নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। অল্প সময়ের মধ্যেই দেশি-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সম্ভব সব কিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে। খুবই কম সময়ে এটি পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসছে এখানে।
স্থানীয়দের ধারণা অদূর ভবিষ্যতে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। এছাড়া ও স্পটটিকে ঘিরে সরকারেরও রয়েছে নানা পরিকল্পনা। সরাসরি গাড়ি নিয়ে নীলগিরি চূড়ায় আরোহণ করা যায়। ফলে পাহাড়ি পথে কোনো দুর্ঘটনার ভয় এখানে থাকে না।
নীলগিরির সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এখান থেকে চোখে পড়ে বান্দরবানের উপর দিয়ে বয়ে চলা সর্পিল সাঙ্গু নদী। সেখান থেকে মনে হবে সাঙ্গু নদী আপনার খুব কাছে। সাঙ্গু নদীর অপরূপ সৌন্দর্য এখান থেকে উপভোগ করা যায়। সাঙ্গুর বুক চিরে বয়ে চলা ছোট ছোট নৌকাগুলোকে দেখলে দূর থেকে মনে হবে স্বপ্নের কোনো ডিঙি বয়ে চলছে সাঙ্গু নদী দিয়ে।
মীর আব্দুল আলীম/এআরএ/পিআর