এবার রক্ষা পাবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য
বাংলাদেশ-ভারত নৌবাণিজ্য প্রটৗেকলভুক্ত মংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত আন্তর্জাতিক নৌপথ মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি দীর্ঘ পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর শনিবার চালু করা হয়েছে। ফলে শনিবার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শ্যালা নদী দিয়ে সব ধরনের বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর মো. মোজাম্মেল হক এই নৌপথটি খুলে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছন। নৌরুটটি খুলে দেয়ায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত এই রুট দিয়ে ভারত থেকে আসা ঢাকাগামী চারটি লাইটারেজ জাহাজ এমভি সায়মা-১, এমভি সাইদ-২, এএফ আহমেদ ও এমভি শিপা-নিশাসহ ৪০টি চলাচল করেছে। এতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর মো. মোজাম্মেল হক শনিবার সকালে সরেজমিনে ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে এই চ্যানেলের ভরাট হয়ে যাওয়া ২২ কিলোমিটার অংশের খনন কাজ পরিদর্শন শেষে দিনের প্রথম জোয়ারের সময় ১০ ফুট গভীরতার লাইটারেজ জাহাজ চলাচলের জন্য খুলে দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এরপর শুরু হয় অপেক্ষমান লাইটারেজ জাহাজ চলাচল।
এসময় বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের জানান, গত মে মাস থেকে পূর্ণ জোয়ারের এ রুট দিয়ে শুধুমাত্র পণ্যবাহী ছোট আকৃতির নৌযান চলাচল করেছে। কেবল সাত ফুট গভীরতার জাহাজগুলোকে পূর্ণ জোয়ারের সময় চলাচল করতে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এখন থেকে ১০ ফুট গভীরতার লাইটারেজ জাহাজও এ রুট দিয়ে জোয়ারের সময় চলাচল করতে পারবে। ফলে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শ্যালা নদী দিয়ে শনিবার থেকে সব ধরনের বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।
মংলা বন্দরের সঙ্গে পণ্যবাহী জাহাজের যোগাযোগের সুবিধার্থে ১৯৭৪ সালে স্বল্প দূরত্বের বিকল্প এই নৌপথটি চালু করা হয়। দীর্ঘ তিন দশক বিকল্প এই চ্যানেলটি স্বাভাবিক ছিল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও স্থানীয় শাসকদলের নেতার নৌপথের দুপাশের সরকারি খালগুলোর বিভিন্ন স্থানে শত-শত অবৈধ্য বাঁধ দিয়ে লোনা পানি আটকিয়ে চিংড়ি চাষ করায় কারণে দ্রুত মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথের রামপাল ও মংলার কিছু অংশে নাব্যতা সঙ্কট সৃষ্টি হতে থাকে। এক পর্যায়ে তীব্র নাব্যতা সঙ্কটের মুখে ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল নৌপথটি পরিত্যক্ত হয়। তবে মংলা বন্দরের সঙ্গে নৌ যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন এবং ভারত-বাংলাদেশ নৌপ্রটোকল রুট চালু রাখতে বিআইডিব্লিউটিএ বন বিভাগের বাধা উপেক্ষা করে সুন্দরবনের শ্যালা নদীর ভেতর দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। এর ফলে হুমকির মুখে পড়া সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ে পড়ে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবন। সুন্দরবনকে বাঁচাতে ছুটে আসতে হয় খোদ জাতিসংঘের পবিবেশ বিশেষজ্ঞদের। সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনায় আবারো আলোচনায় আসে মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌপথের গুরুত্ব।
বিআইডব্লিউটিএ এর খুলনার উপপরিচালক (নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন) মো. আশরাফ হোসেন বিকেলে জাগো নিউজকে জানান, শনিবার বিকেল পর্যন্ত এই রুট দিয়ে ভারত থেকে আসা ঢাকাগামী ৪টি লাইটারেজ জাহাজ এমভি সায়মা-১, এমভি সাইদ- ২, এএফ আহমেদ ও এমভি শিপা-নিশাসহ ৪০টি চলাচল করেছে। এতে তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এর আগে গত জুন মাসের মধ্যে এ রুটটি পুরোপুরি চালু করার কথা বলা হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য তা ফলপ্রসু হয়নি। চ্যানেলেন কিছু অংশের খনন কাজ এখনো চলছে। তবে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে চ্যানেলটির খনন কাজ পুরোপুরি শেষ হবে বলে এই কর্মকর্তা দাবি করেন।
শওকত আলী বাবু/এমজেড/আরআইপি