ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আর্সেনিকে ৭ বছরে ১৩ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৫০০

প্রকাশিত: ০৭:৪৩ এএম, ০২ অক্টোবর ২০১৫

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ে আর্সেনিক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রায় ৫ শতাধিক লোক এ পর্যন্ত আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত ৭ বছরে মারা গেছেন ১৩ জন।

জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় প্রথম আর্সেনিকের দেখা মিললেও দীর্ঘ ১৭ বছরে তা প্রতিরোধে তেমন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও ২টি এনজিও  আর্সেনিক আধিক্য এলাকায় শুধুমাত্র জরিপ কাজ করেই ক্ষান্ত রয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগ স্থানীয় অফিসের মাধ্যমে ৩ উপজেলার ২৯৭টি নলকূপ ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে ২৭টিকে আর্সেনিকযুক্ত বলে শনাক্ত করে। ফিল্ড কিটের মাধ্যমে আরো ১৬ হাজার নলকূপে পরীক্ষা চালিয়ে ১ হাজার ৪৯৫টি নলকূপকে আর্সেনিকযুক্ত বলে সনাক্ত করে লাল চিহ্ন দিয়েছে।

এ ব্যাপারে গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মতিন বলেন, আমার ইউনিয়নের অনেক নলকূপের পানিই আর্সেনিকে ভরা। আমরা ইউনিয়নের জনগণকে সচেতন করতে পাড়ায় মহল্লায় গিয়ে আসেনিকযুক্ত পানি পানে নিষেধ করছি, কোথাও কোথাও বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, আর্সেনিকের ভয়াবহ ছোবল থেকে এ ৩ উপজেলার মানুষকে বাঁচাতে চিকিৎসা এমনকি সচেতনতার জন্যও তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এক হিসেব থেকে জানা গেছে, জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় ৩২০, আড়াইহাজার উপজেলায়  ১৫০ এবং রূপগঞ্জ উপজেলায় ৩০ জনকে আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়। তবে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি বলে জানালেন এনজিও সংস্থ্যা রাসোসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়নাল আবেদীন।

AS

জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ডা. গোলজার হোসেন এ প্রতিনিধিকে জানান, ১৯৯৮ সালে প্রথম নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলা সদরে আর্সেনিক ধরা পড়ে। ২ বছর পর ২০০০ সালে ২০ বছর বয়সী ছালেহা আর্সেনিকে আক্রান্ত হন। এ সময় প্রশাসনের টনক নড়ে। আর্সেনিক আক্রান্ত  ছালেহাকে দীর্ঘদিন ঢাকায় চিকিৎসা দেয়া হয়।

এনজিও সংস্থাগুলোর হিসেব মতে, এ তিন উপজেলায় আর্সেনিক চিহ্নিত গ্রামের সংখ্যা ৪৬টি। জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় আর্সেনিকের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ছে। এখানে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, রূপগঞ্জ উপজেলায় ২শ৩৯টি , আড়াইহাজারে ৪ শ২৫ টি, সোনারগাঁও উপজেলায় ৮ শ৫৮টি নলকূপের পানিতে আর্সেনিক ধরা পড়েছে। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ সাহবাসপুর হাসপাতালের সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির জানালেন, মাঝে মধ্যেই হাসপাতালে ২/১ জন আর্সিনিক আক্রান্ত রোগী আসছে। দিন দিন এর ভয়াবহতা বাড়ছে। রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল, ভূলতা, ভোলাব, তারাব, হাটাবতে আর্সেনিকের ভয়াবহতা বেশি।

বেসরকারি কয়েকটি এনজিও সংস্থা আর্সেনিকের ওপর কাজ করলেও তাদের কাজের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ সকল এনজিও শুধুমাত্র পরীক্ষা ও নলকূপে লাল চিহ্ন দেয়া ছাড়া আর কোনো কাজ করতে পারেনি। এলাকায় জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ আর্সেনিকের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করেনি। এজন্য দিনে দিনে এ ৩ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আর্সেনিক আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান বিভাগের কাছে আর্সেনিক আক্রান্তের সঠিক কোনো তথ্য নেই।  আড়াইহাজারের বিনারচরের রিকশা চালক বাবুল মিয়া আর্সেনিকে আক্রান্ত হলে খদ্দেররা তার রিকশায় উঠা বন্ধ করে দেয়। ফলে বাবুল এখন বেকার হয়ে ঘরে বসে খেয়ে না খেয়ে সময় কাটান। সোনারগাঁ উপজেলার সাগরকান্দি গ্রামের অনেকেই এখন আর্সেনিকে আক্রান্ত।

আড়াইহাজার উপজেলা দুপতারার গৃহবধূ রাহেলা বেগম এখন মৃত্যু শয্যায়। এ উপজেলার কয়েক শত নারী-পুরুষ ও শিশু আর্সেনিকে আক্রান্ত। আক্রান্ত পরিবারের তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে অন্য কেউ আত্মীয়তাও করছে না বলে এলাকাবাসী জানায়।

আর্সেনিক আক্রান্ত সোনারগাঁয়ের রেজাউল করিমের মেয়ে মরিয়ম আক্তারকে শিশু সন্তান নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে ফিরে আসতে হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, আর্সেনিকের ভয়াবহতার খবর সিভিল সার্জন অফিসে রয়েছে। তবে চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের নয় বলে তারা  জানান।

তাদের মতে, এ অঞ্চলের আর্সেনিক আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব কমিউনিটি ক্লিনিকের। গত মঙ্গলবার সোনারগাঁ সদর এলাকায় অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে এর অফিস তালাবদ্ধ দেখা যায়। ফোনেও কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি।

রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও ও আড়াইহাজার উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আর্সেনিক আক্রান্ত কিছু রোগীকে তারা ঢাকায় চিকিৎসা দিয়ে ফেরত এনেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ৩ উপজেলায় গত ৭ বছরে আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে ১৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এ অবস্থায়  ইউনিসেফের জিওবি প্রকল্পের আওতায় এ ৩ উপজেলায় স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পানি সরবরাহের কাজ করা হচ্ছে।

মীর আব্দুল আলীম/এসএস/এমএস