ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ছে সংঘর্ষের ঘটনা

প্রকাশিত: ০৪:৪০ এএম, ০২ অক্টোবর ২০১৫

আবারো অশান্ত হয়ে উঠছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষ কিংবা দুই গ্রামবাসীর মধ্যে প্রায়ই ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। প্রথমে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি, টুকটাক হাতাহাতি। এরপর তা রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে।

কারো হাতে টেঁটা-বল্লম, কেউবা আবার হাতে লাঠি-সোটা নিয়ে পরস্পরের দিকে ধেয়ে আসেন। তবে দেশীয় এসব অস্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হলো চিকন লম্বা বাঁশের মাথায় লোহা বসানো টেঁটা। দেখতে নিরীহ এই দেশীয় অস্ত্রটি মাছ ধরার জন্য তৈরি হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দাঙ্গাপ্রবণ এলাকার মানুষরা এ অস্ত্র দিয়ে শীতল রক্তের মাছের বদলে উষ্ণ রক্তের মানুষ মারার খেলায় মেতে উঠেন। তবে এই টেঁটা-বল্লম জেলার সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার সংঘর্ষগুলোতেই বেশি ব্যবহৃত হয়।

শুধুমাত্র গত সেপ্টেম্বর মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নবীনগর, কসবা, সরাইল, আশুগঞ্জ ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় অন্তত ১০টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অন্তত দেড় শতাধিক মানুষ। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই পঙ্গুত্ব বরণের শঙ্কা রয়েছে।

B.baria-Clash

জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মুঠোফোনে টাকা রিচার্জকে কেন্দ্র করে সরাইল উপজেলার সৈয়দটুলা গ্রামের উত্তরপাড়া ও ফকির হাটির দুই যুবকের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্যসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হন। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার গোকুলনগর গ্রামের সিএনজি অটোরিকশার সিরিয়াল দেয়াকে কেন্দ্র করে সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. মোশাররফের (২৬) সঙ্গে আরেক সিএনজি চালক এমরানের বাকবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার জের ধরে দুপুরে এমরান তার সহযোগীদের নিয়ে মোশাররফের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় মোশাররফকে উদ্ধার করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। নিহত মোশাররফ গোকুলনগর গ্রামের মৃত কাশেম মিয়ার ছেলে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে কসবা উপজেলার বাদৈর ইউনিয়নের হাতুরিবাড়ী গ্রামে দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। নিহত আবদুল মালেক (৫০) হাতুরিবাড়ী গ্রামের মৃত আলফু মিয়ার ছেলে।

পুলিশ জানায়, আবদুল মালেক তার বাড়িতে পাকা ঘর নির্মাণের জন্য ইটবোঝাই নৌকা নিয়ে হাতুরিবাড়ি গ্রামে আসছিলেন। পথিমধ্যে বাড়ির পাশের একটি বিলে পুঁতে রাখা মাছ ধরার জালের খুঁটি সঙ্গে মালেকের ইটবোঝাই নৌকার সঙ্গে ধাক্কা লেগে খুঁটিটি ভেঙে যায়। এ নিয়ে সন্ধ্যায় জালের মালিক বড় মিয়ার সমর্থকদের সঙ্গে মালেকের সমর্থকদের সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত হওয়া মালেককে প্রথমে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়ার পথে রাতে তার মৃত্যু হয়।

B.baria-Clash

গত ২৪ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা গ্রামে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ২২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় জেলার সরাইল উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের উত্তরপাড়া ও দক্ষিণপাড়ার লোকজনদের ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘের্ষ অন্তত ১০ জন আহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে নবীনগর উপজেলার কাইতলা উত্তর ইউনিয়নের নেয়াগাঁও গ্রামের টাকা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে মমিনুল ইসলাম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরো ১০ জন। নিহত মমিনুল ইসলাম নোয়াগাঁও গ্রামের আবদুস সোবহানের ছেলে।

এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে কসবা উপজেলার পৌরশহরের গৌরিয়ারূপ গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় মাদরাসা নিয়ে পূর্ববিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় আবু নাসের (৬৫) নামে সাবেক এক সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত আবু নাসের গৌরিয়ারূপ গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।

পরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা ইউনিয়নের চরচারতলা ও শরীয়তনগর গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে দুই রাউন্ড টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মিন্দালীপাড়া ও শরীফপুর এলাকার দুই ব্যক্তির মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে হাতাহাতি হয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকটি ঘর-বাড়ি ও দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

এসব তুচ্ছ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মৃত্যুকে দুঃখজনক উল্লেখ করে জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি সাংবাদিক পীযূষ কান্তি আচার্য জাগো নিউজক বলেন, এসব ঘটনা সামাজিক অস্থিরতারই বহিঃপ্রকাশ। এগুলো থেকে পরিত্রাণের জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। পাশাপাশি এসব ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং মামলা নিয়ে পুলিশ যেন বাণিজ্য না করে সেদিকে খেয়াল রাখার দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিটি সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের হয়েছে এবং আসামিও গ্রেফতার হয়েছে। আমরা জেলার দাঙ্গাপ্রবণ এলাকা ও যারা দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকা তৈরি করছি। তালিকা তৈরির পর তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি পুলিশের একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিম জেলার দাঙ্গাপ্রবণ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে-বাড়িতে গিয়ে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।

আজিজুল আলম সঞ্চয়/এমজেড/এমএস