গাইবান্ধায় নদী ভাঙনের প্রতিবাদে নৌকা মিছিল
গাইবান্ধা সদর উপজেলার গোঘাট, কামারজানি, গিদারি, মালিবাড়ি এবং সুন্দরগঞ্জের কাপাসিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন ঠেকানোর দাবিতে এলাকাবাসীর উদ্যোগে শহরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করেন।
বৃহস্পতিবার গাইবান্ধার কামারজানি থেকে নৌকায় করে শত শত মানুষ নৌকা মিছিলের আয়োজন করে। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে কয়েকশ নারী-পুরুষের নৌকা মিছিলটি গাইবান্ধা শহরের নতুন ব্রিজ ঘাটে এসে পৌঁছালেও তাদের সে কর্মসূচি ভণ্ডুল হয়ে যায়। অথচ ভাঙন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নদী ভাঙন ঠেকাতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশেই ১০টি নৌকা নিয়ে এ নৌকা মিছিলের আয়োজন করেছিল।
সরকারি উদ্যোগে এক দশক আগে বালাসিঘাটের উত্তরাংশ থেকে কামারজানি বন্দর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকায় সিসি ব্লক দ্বারা ব্রহ্মপুত্রের তীর সংরক্ষণ কাজ করা হয়। কিন্তু কামারজানি বন্দরের উত্তরাংশ, গোঘাট, মালিবাড়ি, গিদারি এবং সুন্দরগঞ্জের কাপাসিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন ঠেকাতে কোনো প্রতিরক্ষামূলক কাজ করা হয়নি। ফলে গোঘাট, গিদারি ও মালিবাড়ি এলাকায় গত তিন সপ্তাহ থেকে ব্যাপক নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সাত শতাধিক বাড়ি-ঘর, মসজিদ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী কামারজানি বন্দর, গোঘাট গ্রামসহ সোনালী ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, এনজিও কার্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ডাকঘর, ভূমি অফিস, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ওয়াপদা বেড়ি বাধ, গুলেটরগেট, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারি বে-সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ওইসব এলাকার মানুষ এখন ভাঙন আতঙ্কে বিনিদ্র রজনী পার করছেন।
এ অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, জাসদ, বাসদ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থনে ভাঙন কবলিত ওইসব এলাকার কয়েকশ নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে বৃহস্পতিবার ১০টি নৌকা নিয়ে গাইবান্ধা শহরে মানববন্ধন এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদানের উদ্যোগ নেয়। তারা ফেস্টুন-ব্যানারসহ নৌকায় চেপে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে করতে গাইবান্ধা শহরের নিউ ব্রিজ ঘাটে এসে নৌকা থেকে নামে। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তাদের আগমনের খবর পৌঁছে গেলে নদী ঘাটে পুলিশ পাঠানো হয়।
পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয় কর্তৃপক্ষ ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং ভাঙন রোধের বিষয়টি জরিপ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে লোক পাঠানো হচ্ছে। পুলিশের দেয়া আশ্বাসের প্রেক্ষিতে একটি অংশ স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু অপর অংশ স্মারকলিপি দেয়ার ব্যাপারে অবিচল থাকায় নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। তখন পুলিশও এতে জড়িয়ে পড়ে।
বাসদ সমর্থিত বেশকিছু লোকজন হামলার শিকার হন। ওই দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তাদের দলের ১০ জন কর্মী সরকার দলীয় সমর্থকদের হামলায় আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে জানান, ওই ঘটনায় বাসদের ছাত্রফ্রন্টের ওয়ারেস মণ্ডল রাঙ্গা নামে এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অমিত দাশ/এমজেড/বিএ