ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মুক্তিযোদ্ধা এখন রাজাকার, তালিকায় নেই এমপির বাবা

সাইফুল ইসলাম মিরাজ | বরগুনা | প্রকাশিত: ০৮:১৭ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠা বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বাবা মো. খলিলুর রহমানের নাম রাজাকারের তালিকায় আসেনি।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় এমপি রিমনের বাবার নাম পাওয়া যায়নি। তবে এমপির বাবার নামের স্থলে একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধার নাম এসেছে রাজাকারের তালিকায়।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, এমপি রিমনের বাবা খলিলুর রহমান ছিলেন বরগুনার প্রথম সারির রাজাকার। মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করেছেন তিনি। কিন্তু খলিলুর রহমান ওরফে খলিল চেয়ারম্যানের নাম সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় না থাকায় ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা।

একই সঙ্গে খলিলুর রহমান ওরফে খলিল চেয়ারম্যানের নামের সঙ্গে মিল থাকায় মো. খলিলুর রহমান (মানিক) নামের একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধার নাম এসেছে রাজাকারের তালিকায়। বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। এতে ক্ষুব্ধ গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা মো. খলিলুর রহমানের (মানিক) পরিবারের সদস্যরা।

সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় দেখা যায়, বরগুনার পাথরঘাটার রাজাকারদের তালিকায় সাত নম্বরে রয়েছেন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্য খলিলুর রহমানের (মানিক) নাম। তার বাবার নাম হাজি আ. ছাদের। অথচ রাজাকারের তালিকায় নেই বরগুনা-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বাবা মো. খলিলুর রহমানের নাম। এই খলিলুর রহমান ওরফে খলিল চেয়ারম্যানের বাবার নাম লোহা মিয়া।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মো. খলিলুর রহমানের (মানিক) প্রবাসী ছেলে মো. বেলাল হোসাইন বলেন, আমার বাবা গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দুই বছর হলো তিনি মারা গেছেন। বাবা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়েছেন। এছাড়া আমরা শহীদ পরিবারের সদস্য। আমার চাচা মো. মোতালেব কেরানীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে পাকিস্তানি হানাদাররা। অথচ এখন আমার বাবাকে রাজাকার বানানো হলো। শহীদ পরিবারের গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা কীভাবে ‘রাজাকার’ হলো জানতে চাই আমরা। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি রাজাকারের তালিকা থেকে আমার বাবার নাম বাদ দেয়ার অনুরোধ জানাই।

বেলাল হোসাইন আরও বলেন, আমার বাবার নামের সঙ্গে মিল আছে এরকম একজন ‘রাজাকার’ আছে আমাদের গ্রামে। সেই ‘রাজাকারের’ নাম বাদ দিতে কিংবা ভুলবশত আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার নাম ‘রাজাকারের’ তালিকায় আনা হয়েছে। আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার নাম রাজাকারের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বরগুনা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবদুল মোতালেব মৃধা বলেন, বরগুনায় রাজাকারের তালিকায় এক নম্বরে এমপি রিমনের বাবা মো. খলিলুর রহমানের নাম থাকার কথা ছিল। কিন্তু দেখে আশ্চর্য হলাম রাজাকারের তালিকায় তার নাম নেই। অথচ গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমানের (মানিক) নাম রাজাকারের তালিকায়। খলিলুর রহমান মানিক গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এমপি রিমনের বাবা খলিলুর রহমান রাজাকার, এতেও সন্দেহ নেই।

তিনি আরও বলেন, এমপি রিমনের বাবা মরহুম মো. খলিলুর রহমান ছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর। খলিলুর রহমান বরগুনা সাব-ডিভিশনের শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। রিমন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার রাজাকার বাবার নামে রাস্তা নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তা প্রতিহত করেছি। অথচ সেই কুখ্যাত রাজাকারের নাম তালিকায় নেই। এতে আমরা হতাশ হয়েছি।

দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একটি ইউনিটের কমান্ডার আবদুল হালিম ওরফে কমরেড হালিম বলেন, এমপি রিমনের বাবা মো. খলিলুর রহমান ছিলেন কুখ্যাত রাজাকার। খলিলুর রহমানের বাবার নাম লোহা মিয়া। এলাকায় রাজাকার খলিলুর রহমান, খলিল চেয়ারম্যান নামে এখনো পরিচিত। খলিল চেয়ারম্যান ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছেন। এখানের সব মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিকামী রাজাকার খলিলকে ভালো করেই চেনেন।

তিনি আরও বলেন, এমপি রিমনের বাবা খলিল চেয়ারম্যানের নাম রাজাকার তালিকার শুরুতে থাকার কথা। খলিল চেয়ারম্যান পাথরঘাটার শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি বরগুনা সাব-ডিভিশনের শান্তি কমিটির সভাপতিও ছিলেন। অথচ খলিল চেয়ারম্যানের নামই নেই রাজাকারের তালিকায়। সেখানে একই নামের একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম এসেছে। এটা গভীর একটি ষড়যন্ত্র। অবিলম্বে রাজাকারের তালিকা থেকে গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদ দিতে হবে।

এ বিষয়ে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন জাগো নিউজকে বলেন, সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকার বেশকিছু অসংগতি আমারও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। রাজাকারের তালিকায় খলিলুর রহমানের (মানিক) নাম আসা অত্যন্ত দুঃখজনক। একই তালিকায় নাম এসেছে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মজিবুল হক নয়া ভাইয়ের এবং আমার প্রতিবেশী মুক্তিকামী ব্যক্তিত্ব আমির হামজার, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

তালিকা প্রকাশে আমার বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ নেই উল্লেখ করে এমপি রিমন বলেন, প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় যে অসংগতি দেখা গেছে তা সংশোধন হবে।

এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, রাজাকারের তালিকায় গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধার নাম আসার বিষয়টি আমি জেনেছি। এটি সংশোধনের জন্য ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের কেউ আবেদন করলে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

মিরাজ/এএম/এমএস