ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

দখলদারদের কবলে ওয়েলিংটন মাঠ

প্রকাশিত: ০৭:১৬ এএম, ০১ অক্টোবর ২০১৫

নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী ওয়েলিংটন ফুটবল (কুড়িরডোব) মাঠটি প্রতিনিয়ত দখল হয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, প্রায় দেড়শত বছর আগে নড়াইলের প্রভাবশালী জমিদারদের বাড়ির পূর্ব পাশে ৮ একর জায়গার উপর গড়ে তোলেন ওয়েলিংটন ফুটবল মাঠ।

এ মাঠে এক সময় ভারতের বিখ্যাত মোহন বাগানসহ বিদেশি দল ফুটবল খেলতে আসতো এবং বিদেশি একজন বিখ্যাত ফুটবলার ওয়েলিংটনের নাম অনুসারেই এ মাঠের নাম রাখা হয়েছিল ওয়েলিংটন।

কালের আবর্তে ওয়েলিংটন মাঠটি স্থানীয়ভাবে কুড়িরডোব মাঠ হিসেবেই ব্যাপক পরিচিত। তৎকালীন জমিদাররা নড়াইলে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে মাঠ সংলগ্ন ১৮৫৭ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় ও ১৮৮৬ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৪৭ পরবর্তীতে নড়াইলের জমিদাররা তাদের সহায়-সম্পদ ফেলে ভারতে পাড়ি জমায়।

১৯৭৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এবং নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ ও ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে এক মধ্যস্থতায় কলেজ ও স্কুলকে সম্পদ বন্টনের সিদ্ধান্ত হয়।

সেটেলমেন্ট অফিসে এক মামলার আবেদনের ভিত্তিতে ১৯৮৬ সালের ২৯ জুলাই নড়াইলের তৎকালীন জেলা প্রশাসক নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ ও কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়কে দখল সূত্রে স্কেস ম্যাপ করে জমিদারদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি ২৫ একর বন্টন করেন। এর মধ্যে খেলার মাঠ ছিল প্রায় ৮ একরের মতো। যার ৩ একরের মতো ছিল কলেজের এবং ৫ একর ছিল স্কুলের।
স্কুল কর্তৃপক্ষ এক যুগ আগে মাঠের পশ্চিম দিকের ৬০ শতক জায়গা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে আবাসনের জন্য বিক্রি করে।

স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন পন্থায় কাগজ তৈরি করে স্কুলের প্রায় আরো ১ একর জায়গা দখল করে নেয়। স্কুলের সঙ্গে মাঠের উত্তর ও পশ্চিম পার্শ্বে স্থানীয় নির্মল ভদ্র নামে এক ব্যক্তির নড়াইল দেওয়ানী আদালতে ৪০ শতক ও অ্যাড. মিয়া মো. আব্দুল্লাহর সঙ্গে হাইকোর্টে ৪১ শতক জায়গা নিয়ে মামলা চলছে।

অন্যদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ২০০৫ সালের ২৩ জুন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাঠের দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে হোমিওপ্যাথি কলেজকে প্রায় ৫০ শতক জায়গা ৯৯ বছরের লিজ প্রদান করে। পরে এ নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হলেও হোমিও কলেজ স্থাপনের স্বার্থে স্থানীয়ভাবে এক শালিসে ভিক্টোরিয়া স্কুল কর্তৃপক্ষ হোমিও কলেজকে ৩১ শতক জায়গা ছেড়ে দেয়। মাঠের পূর্ব, দক্ষিণ ও উত্তর পার্শ্বে ভাসমান প্রায় ৫০টি পরিবারের কাঁচা ঘরবাড়ি করে বসবাস করছে। ৮ একরের এ মাঠটি বর্তমানে দখলের কবলে পড়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কলেজের জায়গা দখলমুক্ত করতে ইতোপূর্বে একবার উচ্ছেদ নোটিশ দেয়া হয়েছিল। তাতে কোনো কাজ হয়নি। পুনরায় ৩০টি বাড়ি উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। উচ্ছেদের ব্যাপারে প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের সাহায্য নেয়া হবে।

ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু নিমাই বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, মাঠের উত্তর পাশে কতগুলো বস্তি রয়েছে যার কোনো হিসাব নেই। দোকান লিজ রয়েছে ৩টি। আদালতে দুটি মামলা বিচারাধীন। অবৈধ বস্তি ও দোকান উচ্ছেদের নোটিশ দেয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ভলিবল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু বলেছেন, এত বড় এবং সুন্দর মাঠ বাংলাদেশের কোথাও নেই। জমিদারদের নির্মিত এ মাঠে বৃষ্টি হলে পানিতে ভেসে ভরে যায়।  এটিকে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম করার অফিশিয়াল অর্ডারও হয়েছিল। কিন্তু ভিক্টোরিয়া কলেজ ও স্কুলসহ স্থানীয় কিছু লোকের বিরোধীতায় তা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরো বলেন, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে স্টেডিয়াম এবং সেখানে সীমানা প্রাচীর দেয়া হবে। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এটিকে উপজেলা মাঠের প্রস্তাব দিয়েছি। যদি পাস হয় এবং ভিক্টোরিয়া কলেজ ও স্কুল রাজি হয় তাহলে মাঠটি দখলমুক্ত থাকবে।

জেলা প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ জাগো নিউজকে বলেছেন, বস্তি সমস্যা পুরনো। বস্তি উচ্ছেদের ব্যাপারে কলেজ ও স্কুলের পক্ষ  থেকে আবেদন করা হলে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং মাঠ দখলমুক্ত করার সকল প্রকার সহযোগিতা করবে।  

হাফিজুল নিলু/এসএস/আরআইপি