ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ধানের মণ ৮৫০ টাকা হলে লাভবান হবেন কৃষকরা

জেলা প্রতিনিধি | নওগাঁ | প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

উত্তরাঞ্চলের খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা নওগাঁ। একমাস ধরে আমন ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের মতো এবারও আমনের ফলন ভালো হয়েছে। হঠাৎ করেই গত ১৫ দিন থেকে বাজারে ধান-চালের দাম কমেছে। ধানের দাম কম হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে আগাম ধান কেনার ঘোষণা দিলেও বাজারে দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে আমন ধান চাষ করা হয়ে থাকে। ফলে বোরো আবাদের চেয়ে তুলনামূলক আমনের আবাদের খরচ কম হয়ে থাকে। গত একমাস থেকে সর্বত্রই আমন ধান কাটা মাড়াই চলছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় মাড়াইয়ের আগে কাটা ধান জমিতে শুকানো হচ্ছে। ধান গোলায় ওঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা-আমন মৌসুমে জেলার প্রায় এক লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়। যেখান প্রতি হেক্টরে ৩ মেট্রিক টন হিসেবে প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হবে। ইতোমধ্যে আগাম ধান কাটা-মাড়াই প্রায় শেষের দিকে। এ বছর বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে।

Naogaon-Paddy-Pic02

মিল মালিক, পাইকারী ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫-২০ দিন আগে প্রকার ভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ৩-৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এক সপ্তাহ থেকে চালের দাম কমে বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আটাশ ৩৬-৩৮ টাকা, জিরা ৩৮-৪০ টাকা, মিনিকেট ৪২-৪৪ টাকা, স্বর্ণা-৫ ২৮-৩০ টাকা ও হাইব্রিড ২৩-২৪ টাকা কেজি।

জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চান্দাশ গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, ৫ বিঘা জমিতে স্বর্ণা-৫ জাতের ধান আবাদ করেছি। প্রতি বিঘাতে ফলন হয়েছে ১৬-১৭ মণ। জমিতে ধান লাগানো থেকে শুরু করে সার, ওষুধ ও কাটা-মাড়াই করে ঘরে ওঠাতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে থাকে। বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬২০ টাকা থেকে ৬৪০ টাকা। ৬৪০ টাকা দরে ১৭ মণ ধান বিক্রি হলে দাম পাওয়া যাবে ১০ হাজার ৮৮০ টাকা। আর উৎপাদন খরচ ৮ হাজার টাকা বাদ দিলে থাকে ২ হাজার ৮৮০ টাকা। এতে করে কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে। যদি ধানের দাম ৮৫০ টাকার ওপর পাওয়া যায় তাহলে আবাদের খরচ মিটিয়ে কিছু টাকা ঘরে উঠবে।

বদলগাছী উপজেলার তেজাপাড়ার কৃষক শহীদুল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমিতে স্বর্ণা-৫ জাতের ধানের আবাদ করেছি। প্রথমে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও কীটনাশক প্রয়োগে রক্ষা পাই। ফলন কিছুটা কম হয়েছে। ধান উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে আগাম ধান কেনার ঘোষণা দিয়েছে। তবে খোলা বাজারে দাম কম হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

মহাদেবপুর উপজেলার স্বরসতীপুর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জামান হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ধানের দাম কমেছে প্রকারভেদে প্রতি মণে ৫০-৬০ টাকা। স্বর্ণা-৫ জাতের ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৬৪০-৬৫০ টাকা এবং গুটি স্বর্ণা ৬০০-৬১০ টাকা। চিনিগুঁড়া ধানের দামের কোনো দরপতন হয়নি। প্রতি মণ চিনিগুঁড়ার দাম ১ হাজার ৫৩০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান- বাজারে নতুন ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে না। এজন্য তারা ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। তারাতো চাল বিক্রি করেই ধান কিনবেন। এজন্য বাজারে ধানের দাম কমেছে। এতে করে কৃষকরা একটু হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

Naogaon-Paddy-Pic02

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, সরকার সারাদেশে আমন মৌসুমে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান এবং ৪ লাখ মেট্রিক টন চাল কেনার ঘোষণা দিয়েছে। ৪ লাখ মেট্রিক টনের মধ্যে সিদ্ধ চাল সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন এবং আতব চাল ৫ হাজার মেট্রিক টন। নওগাঁ থেকে ধান কেনা হবে ২০ হাজার মেট্রিক টন ও চাল ১৭ হাজার মেট্রিক টন। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) আমরা চালের বরাদ্দ পেয়েছি। এ মাসের ২২ তারিখে মিল মালিকদের সঙ্গে চুক্তির শেষ সময়। এরপর চাল সংগ্রহ শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার দেরিতে ধান ও চাল মজুত করছে। এতে বাজারে ধান ও চালের দাম কমেছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- তিন মাস পর পর আমাদেরকে ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের লভ্যাংশের টাকা পরিশোধ করতে হয়। গত সপ্তাহ খানেক থেকে ব্যবসায়ীরা ধান কেনা কমিয়ে দিয়ে ব্যাংকে ঋণের লভ্যাংশের টাকা পরিশোধ করছেন। এতে বাজারে ধান-চালের দাম কমেছে। সরকার চাল কেনা শুরু করলে বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষকরা দাম পাবেন।

আব্বাস আলী/আরএআর/এমকেএইচ