ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বগুড়ায় চামড়া বাজারে ধস : পাচারের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ১০:২২ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বগুড়ায় কোরবানি ঈদে চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। গত বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে এবার চামড়া কেনা বেচা হয়েছে। শহর পর্যায়ে বিক্রেতারা কিছু টাকা পেলেও গ্রাম পর্যায়ে তা অনেক কম দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ফরিয়া ব্যবসায়ীরা (খুচরা বিক্রেতা) তাদের বিনিয়োগকৃত পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জেলা চামড়া মালিক সমিতি বাজার ধসের জন্য ট্যানারি মালিকদের দায়ী করেছেন। ট্যানারিগুলোতে বছরের পর বছর ব্যবসায়ীদের টাকা আটকে রাখার কারণেই মূলত বাজারে ধস নেমেছে বলে তাদের দাবি।

এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারো উত্তরাঞ্চচলের সীমান্তপথে লাখ লাখ কোরবানির গরু, খাসি, বকরী ও ভেড়ার চামড়া পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থাও চামড়া পাচাররোধে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইতোমধ্যেই বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের দুটি বিভাগীয় শহর ও অন্যান্য জেলাসমূহে পুলিশ কর্মকর্তারা বৈঠক করে যেকোনো মূল্যে মূল্যবান চামড়া পাচাররোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

প্রতিবছরই কোরবানির ঈদে বগুড়ার চামড়া ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ফরিয়া ও ক্ষুদ্র ববসায়ীরাও চামড়া কিনে থাকেন। লাভের আশায় ধার দেনা করে এবারও তারা কিনেছিলেন কোরবানির চামড়া। কিন্তু বাজারে এনে তাদের চোখ ছানাবড়া। মাঠ পর্যায় থেকে চামড়া কেনার পর তারা বাজারে এনে আর দাম পাননি। লাভ তো দূরের কথা, তাদের মূলধন নিয়েই টানাটানি অবস্থা।

বগুড়ার বাদুড়তলা, চকসুত্রাপুর ঘুরে দেখা গেছে, বড় আকৃতির গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ এক হাজার ৮শ টাকা থেকে দুই হাজার টাকায়, মাঝারি আকৃতির এক হাজার দুইশ থেকে এক হাজার সাতশ টাকা এবং ছোট আকৃতির গরুর চামড়া এক হাজার থেকে বারশ টাকায়। এছাড়া ছাগলের চামড়া আকৃতি ভেদে ১৩০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ ট্যানারি মালিক ও বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারে ধসের সৃষ্টি করেছে। তা না হলে বাজারদর এতো কম হওয়ার কথা নয়।

তারা অভিযোগ করেন, মাঠ পর্যায় থেকে চামড়া কেনার জন্য বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি। এ কারণে কম দামে তাদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে।

বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বাজার ধসের কথা স্বীকার করে বলেন, বিশ্ব মন্দার কারণে বিগত কয়েক বছর ধরেই চামড়ার দাম কম যাচ্ছে। এছাড়া ট্যানারি মালিকরা কয়েক বছর ধরে চামড়ার টাকা আটকে রাখার কারণে পুঁজি সংকটে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। স্বল্প পুঁজিতে চামড়া কিনতে গিয়েই এই ধসের সৃষ্টি হয়েছে। টাকা না পাওয়ার কারণেই মূলত চামড়ার দাম কম হয়েছে।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শোকরানা বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই ট্যানারিতে চামড়া সরবরাহ করে। কিন্তু তিন বছর আগে চামড়া নেওয়ার পর আর টাকা দেয়নি ঢাকা ট্যানারির মালিক। ওই কোম্পানির কাছে বগুড়ার ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩০ কোটি টাকা আটকে আছে। এ কারণে নগদ টাকার সরবরাহ কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে পারছেননা।

চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন সমূহের সূত্রে জানা গেছে, এবার সারাদেশ থেকে ৭০ লাখ পিস কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এই টার্গেটের প্রায় অর্ধেক চামড়াই সংগৃহিত হবে উত্তরের ১৬ জেলা থেকে। চামড়া ব্যবসায়ীদের সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। এবার অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও কোরবানির পশুর মূল্য গত বছরের তুলনায় কম হওয়ায় বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ গরু, খাসি ও ভেড়া কোরবানি হয়েছে। দেশের ট্যানানিগুলোতে গত বছরের সংগৃহিত চামড়ার ২৫ শতাংশ চামড়া এখনো অবিক্রিত রয়েছে। সার্বিকভাবে চামড়া ব্যবসার খাত রয়েছে সংকটের মধ্যে। তারপরও এবার ট্যানারি ও ঢাকা কেন্দ্রীক আড়ৎগুলোতে ৮৫ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে গরু, ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় খাসি, ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় খাসি ও ভেড়ার লবন মিশ্রিত চামড়া সংগ্রহের দর নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকার বাইরের জেলা শহরগুলোতে এর থেকে ১০ থেকে ৩০ টাকা কম দরে চামড়া সংগ্রহ করা হবে। আর কোরবানির দিনে সংগৃহিত টাটকা কাঁচা (লবন ছাড়া) চামড়ার দর প্রতিবর্গফুটে আরো ১০ টাকা কম। যা চামড়া ব্যবসায়ের ধস নামার চিহ্ন বহন করে।

একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, চামড়া ব্যবসার এই মন্দা দশারই সুযোগ নিয়েছে পাচার চক্র।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভারতে চামড়া পাচারকারী চক্রটি তাদের শত শত এজেন্টদের কাছে নগদ টাকা দিয়েছে। এজেন্টরা গ্রাম পর্যায় থেকে ওই টাকায় চামড়া সংগ্রহ করে পাচারকারীদের সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিবে। ইউরোপে চামড়া শিল্পে সব চাইতে সমৃদ্ধ ইটালিতে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে উত্তরাঞ্চলের কালো ছাগলের (বেঙ্গল ব্লাক গোট) চামড়ার। এখানকার ভেড়ার চামড়ার চাহিদাও রয়েছে অনেক বেশি। সে কারণেই পাচারকারী চক্রের মাধ্যমে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর কোরবানির ঈদের পরে বিপুল পরিমাণে কালো ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করে লাভবান হয়।

বগুড়ায় ঈদে এবার কোরবানি পশুর চামড়ার বাজারে ছিল ব্যাপক মন্দাবস্থা। কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা হয়েছে একেবারে নিম্নদরে। ব্যাপক দরপতন ঘটে চামড়ার বাজারে।

চামড়া ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত ৫ বছরের মধ্যে চামড়ার এমন নিম্নদর যায়নি।

চামড়া ব্যবসায়ী মাইনুল জানালেন, গরুর চামড়া তিনি ১২০০ টাকা দরে ১৫০ পিছ কিনেছেন। এরপর রাতে সেই চামড়া মোকামে তাকে বিক্রি করতে হয়েছে ১১শ টাকায়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, বগুড়া থেকে যাতে সীমান্ত এলাকায় চামড়া যেতে না পারে সে জন্য প্রতিটি এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কেউ এ ধরনের চেষ্টা করলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

এমএএস/পিআর