এই বাড়ি থেকেই জঙ্গি নিয়োগ করতেন রাজীব গান্ধী
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী। হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও জঙ্গি নিয়োগকারী জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম রাঘবপুর ভুতমারাঘাট (চকদাতেয়া) গ্রামে। জানা গেছে, এই বাড়ি থেকেই হামলার জন্য জঙ্গি নিয়োগ করেছিলনে তিনি।
এই রায়কে ঘিরে তার নিজ এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করলেও রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীর হোসেনের স্বজন ও সাঘাটা উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। তারা দ্রুত রায় কার্যকরেরও দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল হোসেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, প্রায় ১১ বছর আগে জাহাঙ্গীর ব্যবসার জন্য নিজ বাড়ি ছেড়ে স্ত্রীকে নিয়ে গোবিন্দগঞ্জের মালঞ্চ গ্রামে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। এক পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি তৎপরতা শুরু হলে আলোচনায় আসে তার নাম। এ নিয়ে কয়েকবার পুলিশ-র্যাব তার ভাড়াবাসাসহ নিজ বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু তাকে ধরতে পারেনি। তখন থেকেই পলাতক ছিলেন জাহাঙ্গীর। ৬ বছর আগে জাহাঙ্গীরের সন্ধানে তার ১০ বছরের ছেলে ও সাঘাটার একটি স্থানীয় হাফিজিয়া মাদরাসার ছাত্র ওয়াছিদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর থেকে তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা আতঙ্কে ছিলেন। দীর্ঘ চেষ্টার পর টাঙ্গাইল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর চলে আসে জাহাঙ্গীরের জঙ্গি তৎপরতার নানা কাহিনী।
তবে জাহাঙ্গীরের এই জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেন তার মা।
জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীর ছোট বোন রেজওয়ানা জানান, জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন ধরে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে থাকতেন। কখনও দাদার বাড়িতে আসতেন না। তবে তিনি কখন কীভাবে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়েছেন তার কিছুই জানেন না তারা।
জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীর সৎ ভাই মনির মিয়া জানান, জাহাঙ্গীর আমার সৎ ভাই। আমি তাকে কখনও গ্রামে আসতে দেখিনি। শুনেছি মাঝে মাঝে গ্রামে আসত। তবে কখন আসত, কখন যেত, আমরা জানতে পেতাম না। তাকে গ্রেফতারের পরে জানতে পারি, সে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। এই রায়ে আমরা খুশি।
রাঘবপুর গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম জানান, আমরা এই রায়ে অনেক খুশি। দ্রুত রায় কার্যকর হলে এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসবে। ‘জঙ্গিদের আস্তানা’ বলে এই গ্রামের আর বদনাম থাকবে না।
বোনারপাড়ার বাসিন্দা মোখছেদুর রহমান জানান, এই রায়ের মধ্যে দিয়ে সাঘাটা উপজেলা কলঙ্ক মুক্ত হলো। এই মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীর কারণে এলাকার মানুষ আতঙ্কে ছিল।
সাঘাটা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিরুল হোসেন স্বপন জানান, এই ঘটনায় সাতজনের ফাঁসির রায়ে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। এখন দ্রুত রায় কার্যকরের মধ্যে দিয়ে সাঘাটা উপজেলাকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে।
এই রায়ের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল হোসেন জানান, রায়কে ঘিরে সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম রাঘবপুর ভুতমারাঘাট (চকদাতেয়া) গ্রামে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। গত ১৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা জন্য আজ ২৭ নভেম্বর (বুধবার) দিন ধার্য করেন। রায়ে সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন র্যাশ, মো. হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. আব্দুল সবুর খান, শরিফুল ইসলাম খালেক ও মামুনুর রশীদ রিপন।
হলি আর্টিসান মামলার রায়ের সব খবর পড়ুন এক ক্লিকে
জাহিদ খন্দকার/এমবিআর/জেআইএম