‘ধর্ষক’ প্রধান শিক্ষকের পক্ষে এমপি কমল!
কক্সবাজার-৩ আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল ধর্ষণের অভিযোগে বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহালের জোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সোমবার (২৫ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন 'রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের' শিক্ষক-অভিভাবকরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এমপি সাইমুম সরোয়ার কমলের ছোট ভাই, কক্সবাজার আর্ট ক্লাবের সভাপতি ও অভিভাবক তানভীর সরওয়ার রানা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০৬ সালে প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ করিম (বহিষ্কৃত) এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন (জিআর নং-৬৭/০৬)। ওই মামলায় তিনি দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন। পরে সুকৌশলে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে ২০১০ সালে ফের ওই বিদ্যালয়ে যোগ দেন। সে সময় ছাত্রীরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েও তার যোগদান বন্ধ করতে পারেনি।
এরপর ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ধর্ষণ, অনিয়ম, ইভটিজিং এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন পরিচালনা কমিটি। সেই অভিযোগ তদন্তের পর কেন্দ্র সচিব পদ থেকে তাকে অব্যাহতি এবং ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত ও পরে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়।
এ অবস্থায় গত ১৯ নভেম্বর সকালে হঠাৎ বহিরাগত কিছু যুবককে নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চেয়ার দখল করেন ছৈয়দ করিম। এদিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে নানা প্লাকার্ড নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়।
তারা বলেন, ‘ধর্ষক শিক্ষক মুক্ত বিদ্যালয় চাই’। এক পর্যায়ে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ঘেরাও করে। এ অবস্থায় বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, ইউএনও, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনিন সরওয়ার কাবেরি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন এবং অভিভাবক তানভীর সরওয়ার রানা প্রমুখ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্লাসে নিয়ে যান। পরে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ছৈয়দ করিম ও তার ক্যাডারদের সঙ্গে শিক্ষক-অভিভাবকদের হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় ছৈয়দ করিম বাদী হয়ে অভিভাবক তানভীর সরওয়ার রানাকে প্রধান আসামি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে রামু থানায় একটি মামলা করেন( নং-৩৭/১৯)। স্থানীয় এমপি কমলের তদবিরে মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
এদিকে, মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আগে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন অভিযুক্তরা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে বিদ্যালয়ের আসন্ন বার্ষিক পরিক্ষাসহ ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন।
তারা বলেন, একজন এমপি ধর্ষকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। ধর্ষক শিক্ষক যদি আবারও বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পেলে ছাত্রীরা অনিরাপদ থাকবে।
তারা আরও বলেন, যেকানে একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা ধর্ষকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, সেখানে একজন আইন প্রণেতা ধর্ষকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। কার স্বার্থে তার এ অবস্থান এর সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মন্ডল, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এম জয়নাল আবেদীন, তানভির সরওয়ার রানাসহ বিদ্যালয়ের প্রায় ২৫ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যালয়ের ভাপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, ঘটনার পর দিন থেকে তিনি বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ইউএনওকে বারবার অনুরোধ জানালেও তিনি পরিচালনা পর্ষদের সভা আহ্বান করেননি। মামলায় আসামি করায় কয়েকজন শিক্ষক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় ২৭ নভেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, যদি এ পরিস্থিতির সমাধান না হয় তবে পরীক্ষা বর্জন ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রণয় চাকমা বলেন, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষকের যোগদান নিয়ে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। যা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন কাজ করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আগামী ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষা যথা সময়ে নেয়ার জন্য শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের মুঠোফোনেএকাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে রামু থানার ভা প্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, হামলার অভিযোগে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে।
সায়ীদ আলমগীর/এমএমজেড/এমকেএইচ