ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সুপারিতে উজ্জ্বল গ্রামীণ অর্থনীতি, সম্ভাব্য আয় ৩৫০ কোটি টাকা

জেলা প্রতিনিধি | লক্ষ্মীপুর | প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, ২০ নভেম্বর ২০১৯

লক্ষ্মীপুরে উৎপাদিত সুপারি ক্রয়-বিক্রয়ে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। মেঘনা উপকূলীয় এ জনপদে ৩৫০ কোটি টাকা লেনদেনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষও সুপারি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তবে সুপারি বাগানগুলো অপরিকল্পিত ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগিয়ে সুপারি বাগান করলে আরও কয়েকগুণ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ বছর ধরে সুপারি থেকে লক্ষ্মীপুরে একই পরিমাণ সম্ভাব্য আয় নির্ধারণ করছে কৃষি বিভাগ। যদিও এবার ৩০ হেক্টর বেশি জমিতে সুপারি উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু বাড়েনি সম্ভাব্য আয়ের পরিমাণ। আবার কমছেও না। এখানে সুপারির প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র না থাকায় অনেক সময় সুপারির ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন চাষিরা।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বাজার দর যাচাই করেই সুপারির মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এবার ২৫০ টাকা প্রতি কেজি শুকনো সুপারির মূল্য নির্ধারণ করে সম্ভাব্য আয় ৩৫০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তবে বেসরকারি জরিপে এ আয়ের পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

Lakshmipur-Supari

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাঞ্চানগর এলাকার সুপারি ব্যবসায়ী মো. বাবুল ও জামাল হোসেনসহ কয়েকজন জানান, সুপারির মৌসুমে বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীরা নিজেদের চাহিদা মতো সুপারি কিনে। তবে সুপারির কোনো দাম নির্ধারিত থাকে না। ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে দাম হাকিয়ে কাঁচা সুপারি কিনে থাকেন। পরবর্তীতে এই সুপারি ভিজিয়ে ও শুকিয়ে বিক্রি করা হয়। গত মৌসুমে প্রতিমণ শুকনো সুপারি সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮০০ টাকা দরে পাইকারী বিক্রি হয়েছে। এতে প্রতি কেজি সুপারির মূল্য পড়েছে ১৯৫ টাকা।

জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে প্রতি পোন (৮০টি) পাকা সুপারি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। বর্তমানে ৯০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কাঁচা সুপারি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনীতে রোববার ও বৃহস্পতিবার, সদরের দালাল বাজার ও রায়পুর আলিয়া মাদরাসা এলাকায় সোমবার ও শুক্রবার সুপারির বাজার বসে।

Lakshmipur-Supari

এছাড়া সুপারি কেনা-বেচার জমজমাট বাজারের মধ্যে সদরের রসুলগঞ্জ বাজার, ভবানীগঞ্জ, মান্দারী, দত্তপাড়া, জকসিন, রায়পুরের হায়দরগঞ্জ বাজার, সোনাপুর, দেনায়েতপুর, খাসেরহাট, মোল্লারহাট, মীরগঞ্জ, রামগঞ্জ উপজেলা শহর, কাঞ্চনপুর বাজার ও করপাড়া বাজার রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, জেলাব্যাপী কৃষিজমির পাশে কিংবা বাড়ির আঙিনায় সুপারি গাছ রোপণ করে শত শত কোটি টাকার সুপারি উৎপাদিত হচ্ছে। গত মৌসুমে এ জেলায় ৬ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে সুপারি উৎপাদন হয়েছিল। এবার লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলায় ৬ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে সুপারি উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর, রায়পুরে ৩ হাজার ৭১০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৮৯৫ হেক্টর, রামগতিতে ৪৮ হেক্টর ও কমলনগরে ২৬৭ হেক্টর জমি রয়েছে।

Lakshmipur-Supari

এবার সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন সুপারি (শুকনো সুপারি) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিকেজি ২৫০ টাকা মূল্যে উৎপাদিত সুপারির বাজার মূল্য ৩৫০ কোটি টাকা সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

সুপারি চাষি সোহাগ হোসেন ও আবদুল মতিন জানান, এবার সুপারির দাম ভালো ছিল। তবে গত মৌসুমে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। সুপারি প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় ভালো দাম পাওয়া যায় না।

Lakshmipur-Supari

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত) কৃষিবিদ কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আধুনিক পদ্ধতিতে সুপারি বাগান করায় এখানকার কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। বাজারদর যাচাই করে এবার ৩৫০ কোটি টাকা সম্ভাব্য আয় নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস সুপারির প্রধান মৌসুম। লক্ষ্মীপুরে উৎপাদিত সুপারির প্রায় ৭০ ভাগ নদী-নালা, খাল-ডোবা, পুকুর ও পানিভর্তি পাকা হাউজে ভিজিয়ে রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আর ৩০ ভাগ সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ছাড়াও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।

কাজল কায়েস/আরএআর/পিআর