সন্তানকে বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটছেন বাবা
সন্তান পৃথিবীতে আসার পর জন্মের দিন, তারিখ ও সময়সহ প্রতিটি ক্ষণ মনে রাখেন বেশির ভাগ বাবা-মা। সেই সন্তান যদি একমাত্র হয়ে থাকে তাহলে তার প্রতিটি অনুভূতিও আঁকড়ে ধরার চেষ্টা থাকে তাদের। তেমনি এক শিশু আয়ান। দুই মাস পরই দুই বছর বয়স পূর্ণ হবে তার। একমাত্র সন্তানের ২য় জন্মদিন বলে কথা। এজন্য প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার যেন শেষ নেই বাবা ইকরাম শেখ ও মা জ্যোতির।
চার বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ইকরাম শেখ ও জ্যোতি। দুই বছর পরই তাদের পরিপাটি সংসারে আগমন ঘটে সন্তান আয়ানের। একমাত্র সন্তান পৃথিবীতে আসছে এ আনন্দ ঘিরে রাখতো বাবা-মাকে। এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। পৃথিবীর আলো দেখলো আয়ান। তাকে ঘিরে দাদা ও নানা বাড়িতে যেন উৎসব বিরাজ করছে। কারণ ওই দুই পরিবারের একমাত্র নাতি আয়ান।
এরপর শুরু হলো আয়ানকে তিলে তিলে বড় করে তোলার পালা। বাবার ক্লান্তি মুছে যেত সারাদিন অফিসের কাজ শেষে বাসায় গিয়ে আয়ানকে কোলে নিলেই। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে আয়ান। তৈরি হয় নতুন নতুন অনুভূতি। সব মিলে আয়ানকে ঘিরে একটি পরিপূর্ণ সংসার ইকরাম শেখ ও মা জ্যোতির। সেই আদরের সন্তানের সব অনুভূতি সম্প্রতি কালো মেঘে পরিণত হয়েছে। ঘরে ফিরেই যে সন্তানের হাসি মুখটা দেখলে বাবার ক্লান্তি দূর হতো সেই সন্তানের মুখটা দেখে এখন বুকটা ফেটে যায় ইকরাম শেখের। আয়ানকে ঘিরে সবগুলো সুখের অনুভূতি এখন কষ্টের এক বিশাল পাহাড়ে পরিণত হয়েছে।
২৯ সেপ্টেম্বর খুলনায় হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয় আয়ান। আয়ানের বাবা ইকরাম শেখ খুলনা শহরের মিয়া পাড়ার বাসিন্দা। তিনি খুলনা শহরের একটি কম্পিউটার এক্সেসরিজের দোকানে চাকরি করেন।
খুলনায় ডাক্তার দেখানো হয় আয়ানকে। স্বাভাবিক জ্বর মনে হলেও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয় তার। জ্বরের মধ্যে ঘাড়ের পেছনে একাধিক গুটিও উঠে আয়ানের, যা ছিল অস্বাভাবিক। ফুলে যায় চোখ। পাশাপাশি পুরো শরীরে ব্যথা অনুভব করতো। ডাক্তারের দেয়া ওষুধে প্রথম দফায় জ্বর সেরে যায় আয়ানের। এক সপ্তাহ পর আবারও জ্বর শুরু হয় তার।
এরপর সেখানকার এক ডাক্তারের পরামর্শে সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন ইকরাম শেখ। নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে। সেখানেও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সেখানেই রক্তের একটি পরীক্ষায় ধরা পড়ে আয়ানের ক্যান্সার। ডাক্তারি ভাষায় এর নাম একুয়েট লিম্ফব্যালেস্টিক লিউকোমিয়া। অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার মাঝে আয়ানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের হেমাটোলজি বিভাগের অধীনে ভর্তি করা হয়। ২১ দিন সেখানে ভর্তি থাকার পর রিলিজ দেয়া হয়। আয়ান এখন রাজধানীর মিরপুরে থাকছে বাবা-মায়ের সঙ্গে। এর মধ্যে ১৩টি কেমো দেয়া হয়েছে আয়ানকে। ডাক্তার আশ্বাস দিয়েছেন এভাবে চার বছর চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে উঠবে আয়ান। এজন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হবে।
একমাত্র সন্তান ক্যান্সারে আক্রান্ত এ কথা শুনে বাবা-মা যতটা হতাশ হয়েছেন তার চেয়েও বেশি চিন্তায় পড়েছেন চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা খরচ হবে জেনে।
বিভাগীয় শহরে ছোট একটি চাকরি করে কোনো রকমে সুখে থাকার চেষ্টা করেন ইকরাম শেখ। কিন্তু কোনো সঞ্চয় গড়ে তুলতে পারেননি তিনি। এরই মাঝে সন্তানের চিকিৎসা বাবদ প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকার বেশির ভাগই স্বজনদের কাছ থেকে ধার করা।
প্রায় দুই মাস হতে চলেছে সন্তানের চিকিৎসার পেছনে ছুটতে গিয়ে চাকরিতে যোগ দেয়া হয়নি ইকরাম শেখের। চার বছর যেহেতু সন্তানের চিকিৎসা ঢাকায়ই করাতে হবে তাই এ শহরেই থাকার কথা ভাবছেন তিনি। সন্তানের প্রতিটি কেমো দিতে খরচ হচ্ছে দুই হাজার টাকার ওপর। কখনও সপ্তাহে একটি কখনও আবার দুটিও কেমো দিতে হচ্ছে।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে সন্তানের বিষয়ে কথা হয় ইকরাম শেখের। শুরু থেকে এ পর্যন্ত সব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিলেন তিনি। বললেন, চাইলে আমার সন্তানের চিকিৎসার ব্যয় আত্মীয়স্বজন বহন করতে পারে। কিন্তু বিপদে পড়ে দেখলাম প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সন্তানকে নিয়ে এ শহরে আসার পর কয়েক দিন থাকার জন্য অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছি। কিন্তু আশ্রয় পাইনি। যেসব বন্ধুবান্ধবের কাছে টাকা নিয়ে এতদিন ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি নতুন করে আর তাদের কাছে চাইতে পারছি না।
তিনি বলেন, ডাক্তার আশ্বাস দিয়েছেন চিকিৎসা করালে সন্তান আমার সুস্থ হবে। সেই আশায় বুক বেঁধেছি। কিন্তু চিকিৎসা করাবো কীভাবে? আমার তো টাকা নেই। কোথায় পাব এত টাকা। যেদিন কেমো দিতে হয় সেদিনই প্রায় তিন হাজার টাকা খরচ হয়। কেমোগুলো ঠিকভাবে না দিতে পারলে ছেলেটাকে বাঁচাতে পারবো না।
ইকরাম শেখ বলেন, আমার তো টাকা নেই, আমার সন্তানের ক্যান্সার কেন হবে? কত মানুষ কতভাবে টাকা খরচ করছে। বিলাসিতা করছে। অথচ আমার সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছি না টাকার অভাবে। ছোট এই নিষ্পাপ শিশুটার ক্যান্সার কেন হতে হবে, বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন ইকরাম শেখ।
তিনি বলেন, জানি না আমার বাচ্চাকে বাঁচাতে পারবো কীনা? তার কিছু হলে উঠে হয়তো দাঁড়াতে পারবো না আর। মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে আমার। কারণ আয়ান আমার শক্তি।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই প্রকাশ্যে বা নীরবে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আমার ছেলেটাকে বাঁচাতে কেউ কি পাশে দাঁড়াবে না?
আমাদের সমাজে অসংখ্য তরুণ-তরুণী ভালো কাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে অনেকেই মানবিক উদ্যোগ নিয়ে থাকে। তেমনই একটি উদ্যোগ বাঁচিয়ে তুলতে পারে আয়ানকে। আসুন শিশু আয়ানকে বাঁচাতে তার পরিবারের পাশে দাঁড়াই।
আয়ানকে বাঁচাতে সহায়তা পাঠাতে পারেন এ ঠিকানায়। মো. ইকরাম শেখ, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক লি., খুলনা শাখা, হিসাব নং-০০৬১১২০১৪১৮৩৮। আয়ানের বাবার বিকাশ নম্বর-০১৯১১৮৩৬৭৫২।
এমএএস/জেআইএম