১৬ বছরেও এমপিও হয়নি ধামইরহাট কারিগরি কলেজ
নওগাঁর ধামইরহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ ১৬ বছরে এমপিওভুক্ত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। জীবন জীবিকার তাগিদে তারা শিক্ষকতার পাশাপাশি এখন অন্য কাজ করছেন। এ অবস্থায় কলেজটি দ্রুত এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকার শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল।
গত ২৩ অক্টোবর দুই হাজার ৭৩০ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৬ষ্ঠ-৮ম) ৪৩৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৬ষ্ঠ-১০ম) ৯৯৪, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় একাদশ থেকে দ্বাদশ ৬৮, কলেজ একাদশ থেকে দ্বাদশ ৯৩, ডিগ্রি কলেজ (১৩শ-১৫শ) ৫৬, মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দাখিল ৩৫৭, আলিম ১২৮, ফাজিল ৪২, কামিল ২৯, কারিগরি কৃষি ৬২, ভোকেশনাল ১৭৫ এবং এইচএসসি (বিএম) ২৮৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ধামইরহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ। এতে চরম হতাশ হয়েছেন কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ধামইরহাট-নজিপুর-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বিহানীনগরে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আর পাঠদানের অনুমতি দেয়া হয় ২০০৩ সালে।
শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি এলাকার শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল অন্যান্য কারিগরি কলেজের তুলনায় অনেক ভালো। বর্তমানে কলেজে অধ্যক্ষ, তিনজন প্রভাষক, দুইজন প্রদর্শক, একজন অফিস সহকারী, একজন ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট এবং একজন এমএলএসএস কর্মরত আছেন। কলেজে দুই ট্রেডে (কম্পিউটার অপারেশন ও সাচিবিক বিদ্যা) শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪৯ জন। পাশের হার ২০১৯ সালে শতকরা ৯৬ ভাগ, ২০১৮ সালে ৯৮ ভাগ, ২০১৭ সালে ৫৬ ভাগ এবং ২০১৬ সালে ৯৯ ভাগ। যা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক ভালো। তারপরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এবার এমপিওভুক্ত হয়নি।
ফলে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন য় সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে গেছে। অন্য কোনো চাকরিতেও আবেদন করার সুযোগ নেই। এ কারণে হতাশাগ্রস্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কেউ কেউ জীবন-জীবিকার তাগিদে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউবা কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের আশায় কলেজগুলোতে পড়ে আছেন।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেফতাহুল জান্নাত ও সাজ্জাদ হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, কলেজে থেকে তাদের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। শিক্ষকরা ভালভাবে ক্লাসে পাঠদান করান। নিয়মিত ক্লাস হওয়ায় ফলাফলও ভাল।
তারা বলেন, ভাবতে অবাক লাগে শিক্ষকরা চাকরি করেন, কিন্তু কোনো বেতনভাতা পান না। আর এভাবে দীর্ঘদিন বিনাবেতনে শিক্ষকদের পক্ষে পাঠদান করাও সম্ভব না।
নজরুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিস্ত নেই। শুধু সাইনবোর্ড রয়েছে এবং পাঠদানের কোনো যোগ্যতা রাখে না। সেসব প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত হয়েছে। একই ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু আমাদের এলাকায় এতো সুন্দর একটি প্রতিষ্ঠান এমপিও হয়নি। আগামীতে যখন আবারও এমপিও করা হবে এ প্রতিষ্ঠানটি যেন সেখানে অগ্রাধিকার পায় হয় এমনটাই আমাদের দাবি।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ১৬ বছর থেকে কলেজে শ্রম দিয়ে আসছি। এ জন্য প্রতিদিন প্রায় ২০ কিলোমিটার আসা-যাওয়া করতে হয়। কিন্তু কলেজ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায় না। ফলে পড়ানোর পাশাপাশি বড় ভাইকে কৃষি কাজে সহযোগিতা করতে হয়। ৭ সদস্যের যৌথ পরিবার নিয়ে জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। কলেজটি আজ-কাল এমপিও হবে বলে বছরের পর বছর পার হয়ে গেছে। এদিকে বয়স শেষ হওয়ায় অন্য কোনো চাকরির আবেদন করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই ‘এমপিওর আশায় এখন ভেলা ভাসিয়ে যাচ্ছি।’
অধ্যক্ষ হারুনুর রশীদ বলেন, এবার ২০১৭ সালের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। আর ওই বছরই আমাদের ফলাফল তুলনামূলক খারাপ হয়েছিল। তাই শুধু এক বছরের ফলাফলের ওপর ভিত্তি না করে দুই বা তিন বছরের ফলাফল গড় করে এমপিওভুক্ত করা হোক। সেই সঙ্গে আগামীতে এমপিওর সময় ধামইরহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজকেও অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
আব্বাস আলী/এমএমজেড/পিআর