ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নরসিংদীতে প্রেমিকার হাতে প্রেমিক খুন

প্রকাশিত: ১১:০৬ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

নরসিংদীতে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রেমিকার হাতে খুন হলো এক কলেজছাত্র। ক্ষুব্ধ প্রেমিকা প্রেমিকের শরীর থেকে হাত-পা, মাথা আলাদাসহ ৬ টুকরা করে খুন করে। বস্তাবন্দী লাশ নদীতে ফেলার সময় কলেজছাত্রী আনিসা সুলতানা এ্যামিকে (২০) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা।  

বুধবার ভোরে পরিত্যক্ত একটি ডোবা থেকে কলেজ ছাত্রের মাথা, দুটি হাত, দুটি পা ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদি হয়ে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নিহত কলেজছাত্র খোরশেদ আলম (২৩) রায়পুরার নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত অহেদ আলীর ছেলে। তিনি নরসিংদী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী পৌর শহরের গাবতলী এলাকার গোলাম কিবরিয়ার মেয়ে আলিসা সুলতানা এ্যামি নরসিংদী সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের ১ বর্ষের ছাত্রী।  তিনি গাবতলীর ফকরুল ইসলামের বাড়িতে দুই রুমের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করত। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে শিক্ষকতা করতো। ৫ বছর আগে সঙ্গিতা এলাকার শাকিল মিয়ার সঙ্গে এ্যামির বিয়ে হয়। তাদের সোহাগ নামে দুই বছরের একটি সন্তান রয়েছে। দুই বছর আগে স্বামী শাকিল মিয়া এ্যামিকে তালাক দেয়।

 এরই মধ্যে নরসিংদী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র খোরশেদ আলমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। প্রেমের জের ধরে কিছু দিন যেতে না যেতেই এ্যামি কলেজছাত্র খোরশেদকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। ছাত্র বয়সে বিয়ের সুযোগ নেই বলে এ্যামির কাছ থেকে দূরে সরে যায় খোরশেদ। এভাবে চলে যায় কয়েক মাস। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয় এ্যামি। এরই জের ধরে প্রেমিকা এ্যামি গত সোমবার বিকেলে খোরশেদকে গাবতলীতে তার ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে আসে।

এ সময় এ্যামি খোরশেদকে বিয়ে করা জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এতে রাজি না হওয়ায় ভাড়া করা ৪/৫ জন সন্ত্রাসীকে ডেকে নিয়ে আসেন এ্যামি। বিয়েতে রাজি করার জন্য সন্ত্রাসীরা তার উপর নির্যাতন চালান। এতেও খোরশেদ রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ্যামি ও তার ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা প্রথমে হাত ও পা কেটে ফেলেন। পরে তাকে জবাই করে হত্যা পর লাশ খাটের তলায় লুকিয়ে রাখেন। পরে লাশ গুম করার জন্য তার মাথা, দুটি পা ও দুটি হাতসহ শরীরকে ৬ টুকরা করে ফেলেন।

পরদিন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাথা ও অঙ্গবিহীন শরীরের অংশটি পলিথিনের বস্তায় ভরে এ্যামি ও তার সহযোগীরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যোগে নরসিংদী ও শিবপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা সোনাতলা (পুটিয়া বাজারসংলগ্ন) হাড়িদোয়া নদীতে ফেলতে যায়। এ সময় দূর থেকে তিন যুবকসহ এক তরুণীর নদীতে বস্তা ফেলার দৃশ্যটি দেখতে পায় মোস্তফা নামের এক পথচারী। সন্দেহ হলে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে গেলে লাশ ভর্তি বস্তা ফেলে তরুণেরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।

এ সময় এলাকাবাসী এ্যামিকে মস্তকবিহীন লাশের বস্তাসহ হাতে নাতে ধরে ফেলেন। বস্তার মুখ খুলে তাতে মাথা ও হাত-পা বিচ্ছিন্ন একটি লাশ দেখতে পায় তারা।  এ সময় এ্যামি দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। পরে স্থানীয়রা তাকে ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার ভোরে শহরের পুরানপড়া এলাকার একটি পরিত্যক্ত ডোবা থেকে নিহত কলেজছাত্রের মাথা, দুটি হাত, দুটি পা ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোস্তফা মিয়া বলেন, নদীর ধারে কয়েকজন যুবক ও তরুণীকে শলা পরামর্শ করতে দেখা যায়। সামনে এগিয়ে যেতেই ৩ যুবক দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় তরুণীর হাতে একটি বস্তা ছিল। বস্তা খুলতেই মস্তকবিহিন একটি লাশ বের হয়ে আসে।

স্থানীয় অপর একটি সূত্র জানায়, ঘাতক সুন্দরী এ্যামি একাধিক ছেলেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করত। বহু লোকের সঙ্গে ছিল তার অবৈধ সম্পর্ক। এই কারণে তার স্বামী তাকে এক বছর অগে তালাক দেয়। চরিত্রহীন হওয়ায় প্রেমের ডাকে সাড়া দিলেও বিয়ে করতে চায়নি কেউ।

এ ব্যাপারে সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত ) আবু তাহের দেওয়ান বলেন, নিহতের সঙ্গে কলেজছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। নিহতের বড় ভাই বেদন মিয়া বাদি হয়ে এ্যামিকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে ।

সঞ্জিত সাহা/এসএস/পিআর